“আকাশে মেঘ ডাকলে আমার ভয় করে, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে আমার কী হবে! রাতে আকাশে যতক্ষণ মেঘ ডাকে, আমি বসে বসে কাঁদি—বিশেষ করে রাতে, যখন আশেপাশে কেউ থাকে না। তাই আমাকে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই দিন, যতদিন বাঁচব দোয়া করব।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় আশ্রয় নেওয়া ভূমিহীন, অসহায় ও প্রতিবন্ধী নারী সুমাইয়া বেগম (৪১)। বাবা মারা যাওয়ার পর, এই অবিবাহিত নারীর আপন বলতে আর কেউ নেই।
সুমাইয়া বলেন, তিনি অবিবাহিত। তার বাড়ি কৈমারী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পাটবাড়ী এলাকায়। বাবা মৃত সইদার ও মা ছানু বেগম। তার কোনো ভাই-বোন নেই। মা জীবিত থাকলেও কোনো খোঁজখবর নেন না।
তিনি আরও বলেন, “১৩ বছর বয়সে আমার প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সঙ্গে ছিলাম, কিন্তু মা আমাকে ফেলে চলে গেছেন বহু আগেই। তখন থেকে কোথাও কোনো আশ্রয় না পেয়ে দুই মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় এসে আশ্রয় নিই। এলাকাবাসীর সহায়তায় কখনো খেয়ে, আবার না খেয়ে দিন কাটে। তারা দিলে খাই, না দিলে উপোস থাকি। আমি এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য বা সহযোগিতা পাইনি।”
স্থানীয় এক দোকানদার জানান, প্রতিবন্ধী সুমাইয়া প্রায় দুই মাস ধরে পরিষদের বারান্দায় বসবাস করছেন। এলাকাবাসী মিলে তাকে খাবার ও নানাভাবে সহযোগিতা করছে। তাই তার জন্য দ্রুত স্থায়ীভাবে থাকার একটি জায়গা নিশ্চিত করা জরুরি।
কৈমারী ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য আলমগীর জানান, “পরিষদের বারান্দায় আশ্রয় নেওয়া ওই নারীকে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করছি যাতে তার কোনো সমস্যা না হয়। তবে এ ধরনের প্রতিবন্ধীরা সমাজে অবহেলার শিকার। তাদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট কোনো আশ্রয়স্থল না থাকায় তারা খোলা জায়গা বা সরকারি ভবনের বারান্দায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সর্দার আজহারুল ইসলাম জানান, “আমি ব্যক্তিগতভাবে তার তিন বেলার খাবারের ব্যবস্থা করি ও খোঁজখবর রাখি। এলাকাবাসীও খাবারসহ বিভিন্নভাবে তাকে সহযোগিতা করে। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। প্রতিবন্ধীদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন এখন সময়ের দাবি।”
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল সিদ্দিক সাদেক বলেন, “একজন প্রতিবন্ধী নারী আশ্রয়হীন অবস্থায় পরিষদের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে—এটা খুবই দুঃখজনক। আমি শুনেছি, তিনি ভূমিহীন, অসহায় ও দারিদ্র্যপীড়িত। তার মা জীবিত থাকলেও কোনো খোঁজখবর নেন না। তাই সে বাধ্য হয়ে বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে। আমি চেষ্টা করছি তার জন্য কিছু একটা করার। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিবন্ধীদের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই। ফলে তারা খোলা জায়গায় কিংবা সরকারি ভবনের বারান্দায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে উন্নত আশ্রয়, সেবা ও সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “সমাজ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত প্রতিবন্ধী ও অবহেলিত মানুষদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া।”
এইচএস/আরএন