মাদারীপুর পৌরসভায় একটানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরবাসী। মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টির পানি সরে যেতে সময় লাগছে ২-৩ দিনেরও বেশি। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে মাদারীপুরে বৃষ্টি শুরু হলে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ সূর্য সড়ক ও কালিবাড়ি সড়ক মাত্র দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতেই পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নামতে না পারায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পড়ছে মারাত্মক বিড়ম্বনায়। উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুরনো ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যাচ্ছে হাঁটু পানিতে। অনেক স্থানে পানি ঢুকছে বাসা-বাড়িতেও। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তা দীর্ঘ ৩-৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে।
পৌরসভার বেশ কিছু এলাকায় প্রায় সারা বছরই জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। জানা যায়, মাদারীপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৩৪টি মৌজায় প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভা ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়।
পুরান বাজার এলাকার পথচারী রাব্বি মৃধা বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করাই দায় হয়ে পড়েছে। চারপাশে শুধু পানি, বাজারে এসে বিপদে পড়েছি।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদ ও রাজস্বসহ বিভিন্ন খাতে প্রতি বছর পৌরসভা শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। কিন্তু নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করা এবং যত্রতত্র জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
পানিছত্র এলাকার বাসিন্দা লুবনা আক্তার বলেন, ‘এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে থাকে দুই-তিন দিন। এই ভোগান্তির যেন শেষ নেই। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা ডা. অখিল সরকার বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে এই এলাকায় বাস করছি। গত দুই বছর ধরে দেখছি, সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে। পানি সরে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাঁটুপানি পেরিয়ে চলাচল করতে হয়।’
কালিবাড়ি এলাকার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় এমন জলাবদ্ধতা মেনে নেওয়া যায় না। পৌর কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজারের প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। এতে যাত্রী, চালক ও পথচারীরা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। কমে গেছে ক্রেতার সংখ্যা, ফলে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে। ব্যবসায়ীদের দাবি, দিনে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
যাত্রার মাঠ, হামিদ আকন্দ সড়ক, ডা. অখিল বন্ধু সড়ক, শহীদ বাদল সড়ক, কালীবাড়ি রোড, মিলন সিনেমা সড়ক, শহীদ মানিক সড়ক, মন্টু ভূঁইয়া সড়ক, শহীদ বাচ্চু সড়ক, ও নিরাময় হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা—সব জায়গাতেই প্রায় একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এক ঘণ্টার বৃষ্টির পানি নামতেই লেগে যাচ্ছে একদিনের বেশি সময়। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থার পরও পৌর কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততায় সমস্যার কোনো সমাধান মিলছে না।
এছাড়া যত্রতত্র জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন, যা জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যাত্রী, চালক ও পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
মুক্তনগর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘ড্রেনের মুখগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পৌরসভার লোকজন যদি এগুলো নজরে না আনে, তাহলে আমাদের ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
ইজিবাইক চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কগুলোতে খানাখন্দ রয়েছে, তার ওপর জমে থাকা পানি—এই দুইয়ে মিলে চলাচল একেবারে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।’
জুতা ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে ক্রেতারা আসছে না। ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।’
কাঁচামাল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রধান সড়কে হাঁটুসমান পানি জমে আছে। এমন অবস্থায় ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
মাদারীপুর পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুল আলম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হলো ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া। অনেকেই পলিথিনসহ আবর্জনা ড্রেনে ফেলছেন, ফলে মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পৌরসভার কর্মীরা বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। অল্প সময়েই পানি সরে যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
এএইচ/আরএন