সংবাদ সম্মেলনে সুদখোর ও মামলাবাজ শ্যালিকার বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা চাওয়ার মাত্র চারদিন পর, খুলনায় তারই হাতে খুন হলেন ভগ্নিপতি সবুজ খান (৪৫)।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে খুলনা মহানগরীর খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত শ্যালিকা নাজমাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, সকালে কথিত সুদ ব্যবসায়ী ও মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত নাজমার নেতৃত্বে তার স্বামী, ছেলেসহ স্থানীয় কিছু মাদক ব্যবসায়ী সবুজ খানকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহতের স্ত্রী শাহিনুর ও মেয়ে সাথী অভিযোগ করেন, কয়েকদিন আগে নাজমা একজনকে মারতে গেলে সবুজ খান তা ঠেকাতে চেষ্টা করেন। এর জের ধরেই নাজমা ও তার ছেলেরা পরিকল্পিতভাবে সবুজ খানকে হত্যা করে।
এর আগে, গত ৫ অক্টোবর খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত সবুজ খানের জামাতা মো. বাবু অভিযোগ করেন, নাজমা একজন চিহ্নিত সুদ ব্যবসায়ী ও মামলাবাজ। ওই সংবাদ সম্মেলনে সবুজ খান ও তার স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ ধারণা করছে, এই সংবাদ সম্মেলনই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কারণ হতে পারে।
খালিশপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, “ঘটনার পরপরই নাজমাকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং হত্যায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বক্কর কলোনি এলাকার একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন সবুজ খান। সে সময় পরিকল্পিতভাবে তাকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
নিহতের মেয়ে সাথী বেগম বলেন, “আমার বাবা খালিশপুরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নাজমা, কালাম, সোহেল, সুজন, সাগর, জয়, বিজয়, আরিফ ও রিয়াদ আলীর মাদক ও সুদের ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “প্রকাশ্যে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটলেও অস্ত্রধারীদের ভয়ে কেউ বাবাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি।”
এলাকাবাসীর দাবি, গত এক বছর ধরে মাদক ও সুদের একটি বড় সিন্ডিকেট খালিশপুরের বক্কর কলোনি ও আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সবুজ খান ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী গুটিকয়েক সাহসী মানুষের একজন। মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে পথের কাঁটা মনে করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে।
এসএস/আরএন