মা ইলিশ সংরক্ষণে আগামী ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা-তেতুলিয়া নদীসহ বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এই খবরে উপকূলজুড়ে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশার ছায়া। সরকারি সহায়তার ঘাটতি, বিকল্প জীবিকার অনুপস্থিতি এবং পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে জেলেদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় চরফ্যাশনের উপকূলের অন্তত অর্ধ লাখ জেলে ও লক্ষাধিক মৎস্যজীবীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, আশ্বিন মাসে ইলিশের প্রজনন সুরক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি। এ সময় ইলিশকে নির্বিঘ্নে ডিম দেওয়ার সুযোগ করে দিতে সরকার ২২ দিনের জন্য সমুদ্র ও নদীতে ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপকূলের দিনমজুর শ্রেণির জেলেরা, যাদের মাছ ধরাই একমাত্র আয়ের উৎস।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪৮ দিনই মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। অক্টোবরে মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিল মাসে ইলিশের ছয় অভয়াশ্রমে ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকে। এর বাইরে জাটকা রক্ষায় ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বলতে গেলে বছরের ১০ মাস জেলেদের ওপর মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকে।
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সামরাজ মৎস্যঘাটের জেলে আবুল বাশার ও গাছির খাল মৎস্যঘাটের জেলে সামসুদ্দিন মাঝি বলেন, প্রতি বছরই সরকার ইলিশের ভরা মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে আমাদের জন্য সরকার যে বরাদ্দ দেয়, এতে সংসার চলে না। আর যা দেয় তা প্রকৃত জেলে বরাদ্দ চালও পান না। এসব বরাদ্দের চাল যায় প্রভাবশালীদের বাসায়। অনেক সময় পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয় আমাদের। বিগত কয়েক বছর ধরে বুক ভরা আশা নিয়ে সাগরে ও নদীতে গিয়েছি মাছ শিকারে। তবে বেশিরভাগই লোকসান গুনতে হয়েছে। এই বছরে ইলিশের তেমন দেখা মেলেনি। তবুও কিছু মাছ পাওয়া যাচ্ছিল, তা বিক্রি করে কোনোভাবে সংসার চালানো গিয়েছে। এখন সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মাছ ধরতে না পারলে সংসার চালাবো কীভাবে?
জেলেদের অভিযোগ, গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ১২ অক্টোবর থেকে, কিন্তু এ বছর তা এগিয়ে আনা হয়েছে ৩ অক্টোবর থেকে। তাই তারিখ পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন জেলেরা। তারা আরো বলেন, সরকার প্রজনন নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু জেলেরা সে চাল পান না। তা ছাড়া যারা এখনও নিবন্ধিত নন, তারা সম্পূর্ণরূপে এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত। সহায়তার বণ্টনে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে।
দক্ষিণ সাকুচিয়া পঁচাকোড়ালিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী মো. হাবিব দালাল বলেন, ২০ বছর ধরে আমি ইলিশ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ইলিশই আমাদের একমাত্র জীবিকার উৎস। এখন কিছু মাছ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার তারিখ আগাম করায় আমরা হতাশ। এতে আমরা আরও ঋণের বোঝায় পড়ে যাচ্ছি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, মা ইলিশ রক্ষায় এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতেই সরকার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই ২২ দিনে নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলে আমরা আগামীতে অনেক বেশি ইলিশ পেতে পারি। তবে যেসব জেলে এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে বেকার হয়ে পড়েন, তাদের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা সঠিকভাবে বণ্টন করার চেষ্টা করি।
এসআর