জ্বিনের মাধ্যমে করানো হচ্ছে টিউমার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা। দেয়া হচ্ছে ঝাঁড়-ফুঁক, তেল পড়া, পানি পড়া এবং জ্বিন দিয়ে অপারেশন। আর এ পন্থায় হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট পূর্ব নয়াপাড়া গ্রামে চলছে প্রতারণার এই রমরমা ব্যবসা। জ্বিন হাসিলকারী নারী মোছা. জাহেরা বেগম (৫২)। যিনি নিজেকে পরিচয় দেন বানেসা পরী নামে।
সপ্তাহে চার দিন (শনিবার, রোববার, মঙ্গলবার ও বুধবার) রোগী দেখেন জাহেরা বেগম। বাবার বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন তার এই তথাকথিত চিকিৎসালয়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার বাবা আবুল হোসেন, ভাই আব্দুল মান্নান ও বোনের স্বামী জাহিদুল ইসলাম।
এদিকে, ভন্ড কবিরাজ জ্বিন হাসিলকাপঞ জাহেরার কবল থেকে রক্ষার জন্য গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর ইতিমধ্যে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, পুনট পূর্ব নয়াপাড়া গ্রামে জাহেরা প্রায় একযুগ ধরে এ বুজ দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমে রোগীর ফি ৫ টাকা নিলেও এখন নেন প্রতি রোগীর ফি ৩০ টাকা। আর এ প্রতারণা ব্যবসা করে জমি কিনেছেন। আবার তার ভাই আব্দুল মান্নানকে ফ্ল্যাট বাড়ি করে দিয়েছেন। তার টাকা না হলে সারাজীবনে তার ভাই টাইলস করা অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি বানাতে পারতো না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত হতে প্রায় অর্ধশত রোগী প্রাইভেটকার, সিএনজি , অটোরিকশা ও ভ্যানে করে পুনট পূর্ব নয়াপাড়া গ্রামে আসছেন জ্বিন দ্বারা চিকিৎসা নিতে। সিরিয়ালের জন্য প্রতি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩০ টাকা। চিকিৎসার নামে দেওয়া হয় আঙ্গুল দিয়ে ইনজেকশন, জিন ছাড়ানো, তেল পড়া, পানি পড়া এবং ঝাঁড়-ফুঁক। রোগের ধরণ অনুযায়ী জ্বিন দিয়ে অপারেশন করার নামে ফি নেওয়া হয় হাজার হাজার টাকা।
জাহেরা ওরফে বানেসা পরীর কাছে গোবিন্দগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মাসুম নামের হাত ভাঙ্গা এক রোগী।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে আসা এক টিউমার রোগী বিলকিস বলেন, 'অনেক দিন থেকে লোকমুখে শুনে এসেছি দেখি কি হয়...।'
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রসুল বলেন, 'মনে হয় এটা একটা ইসলামবিরোধী কাজ। আমরা চাই গ্রাম থেকে এই প্রতারণা ব্যবসা বন্ধ হোক।'
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মহাতাব আলী প্রামাণিক বলেন, 'উনি বুঝ যেটা দিচ্ছে এটা প্রতারণামূলক কাজ করছে। এটা জায়েজ নয় আর এটা ঠিক নয়। এই প্রতারণা ব্যবসা বন্ধের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
এ বিষয়ে জ্বিন হাসিলকারী কবিরাজ জাহেরা ওরফে বানেসা পরির সাথে দেখা করে কথা বলতে চাইলে তার বোনের স্বামী জাহিদুল ইসলাম তাতে বাধা দেন। একপর্যায়ে জানান জাহেরা ওরফে বানেসা পরী না কি অসুস্থ। তার সাথে কথা বলা যাবেনা। যা বলার তাদেরকে বলতে হবে।
অনেকে চেষ্টায় একপর্যায়ে জাহেরা ওরফে বানেসা পরী বলেন, 'আমি জ্বিনের সঙ্গে কথা বলি, আমার নাম বানেসা পরী। আমাকে সাইড দেন, আমি চলে যাব। এখন থেকে সরে যান। আমি জ্বিন দিয়ে পানি পড়া, তেল পড়া, ঝাঁড়-ফুঁক দেই।'
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মাহফুজ আলম বলেন, 'আমি এইমাত্র জানতে পারলাম উপজেলার পার্শ্ববর্তী কোনো এক গ্রামে জ্বিন দ্বারা ঝাঁড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে যেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও প্রতারণামূলক। এটা কোনো ভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। কেবলমাত্র রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকরাই চিকিৎসা করতে পারেন।'
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, 'পুনট পূর্ব নয়াপাড়ার যে বিষয়টি আমরা শুনলাম। গ্রামে একজন ব্যক্তি ভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে জ্বিন দ্বারা ঝাঁড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমি আমাদের কালাইয়ের নাগরিকদের আহ্বান করবো তারা যেন এই ধরনের অন্ধ বিশ্বাসে বিশ্বাস না করেন। আর যিনি এই ধরনের কাজ করছেন তার ব্যাপারে আমরা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেব।'
টিআই/এমএ