বিশ্বনেতাদের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। এই হামলায় নতুন করে আরও ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-আহলি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী ও দুই শিশু রয়েছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোররাত থেকে ইসরায়েল হামলার তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সেনারা বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং হাজার হাজার মানুষকে দক্ষিণ দিকে পালাতে বাধ্য করছে। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনের মতে, এসব পদক্ষেপ মূলত গাজা উপত্যকার ওপর স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং দখলকৃত পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখার চেষ্টা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৬০ জন। ধারণা করা হচ্ছে, বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।
জাতিসংঘে নিন্দা
বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও কূটনীতিকরা। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, "যারা শিশু হত্যার মাধ্যমে মানুষকে আতঙ্কিত করছে, তারা মানবতার যোগ্য নয়।" সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানান।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইডে জানান, জুলাই মাসে গৃহীত ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’-কে ভিত্তি করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গোপন কূটনৈতিক আলোচনা চলছে। মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, "ওয়াশিংটন আশাবাদী যে কয়েক দিনের মধ্যেই কোনো অগ্রগতির ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হবে।" তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা ইতোমধ্যে বিশ্বনেতাদের জানানো হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আগেও ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনায় বাধা দিয়েছেন। এ মাসের শুরুতে দোহায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেওয়া হামাস নেতাদের হত্যা করতে নির্দেশ দেন তিনি। গত ১৮ মার্চ সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি থেকে একতরফাভাবে সরে এসে তিনি তীব্র বিমান হামলা শুরু করেন এবং পূর্ণমাত্রায় মানবিক সাহায্যের ওপর অবরোধ আরোপ করেন, যার ফলে দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও বিক্ষোভ
ইসরায়েলের ভেতরেও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে দেশ ছাড়ার আগে তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এরই মধ্যে নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে জানানো হয়, তিনি আবারও আন্তর্জাতিকভাবে প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সূত্র: আল-জাজিরা
আরএন