সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র প্রধান সড়কটি বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উত্তরে ভারতের সীমান্ত আর দক্ষিণে উপজেলা সদর—এর মাঝামাঝি বিস্তৃত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ইটবিছানো সড়কটি বছরের পর বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এখন রীতিমতো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দুই পাশে বিস্তৃত হাওরের ঢেউ আর সাম্প্রতিক বন্যার কারণে সড়কের বড় অংশ ভেঙে গেছে, কোথাও কোথাও বিলীন হয়ে গেছে হাওরের গর্ভে। প্রতিদিন অসুস্থ রোগী ও প্রসূতি মায়েরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন এই ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে। অথচ এটিই মধ্যনগর, বংশীকুন্ডা উত্তর ও দক্ষিণ, চামরদানীসহ আশপাশের ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা সদরে পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা।
উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মধ্যনগর থেকে মহিষখলার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এলজিইডির আওতায় মধ্যনগর-মহিষখলা সড়কের ১৮ কিলোমিটার ইটবিছানো সড়ক (এইচবিবি) নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, নির্মাণকালে হাওরের ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট ভাঙন ঠেকাতে পাকা ব্লকের পরিবর্তে জিও ব্যাগভর্তি বালুর বস্তা ব্যবহার করা হয়, যা নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই ঢেউয়ের আঘাতে ধসে পড়ে। নির্মাণকালে সড়কের প্রস্থ ছিল প্রায় ২৪ ফুট। তবে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া ও গত কয়েক বছরের বন্যার প্রভাবে সড়কটি ভেঙেচুরে সংকুচিত হয়ে কিছু অংশে ৫ ফুট, কোথাও ৩ ফুট প্রস্থে দাঁড়িয়েছে। আবার কিছু অংশে পুরো সড়ক হাওরের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজং শ্রী দশরথ চন্দ্র অধিকারী বলেন, “এই রাস্তাটি উপজেলার সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এটি এখন যান চলাচলের উপযোগী নয়। যার দরুন সীমান্তবর্তী এলাকা মহিষখলা থেকে উপজেলাকেন্দ্রিক সেবা গ্রহণ করতে মধ্যনগর যাওয়া দুর্ভোগের নামান্তর।”
বর্তমানে এই সড়কের কিছু অংশে ঢিমেতালে পুনর্নির্মাণ কাজ চলছে। দ্রুতগতিতে সড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সড়কটি জনচলাচলের উপযোগী রাখতে সাময়িক সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইনামুল গণী তালুকদার রুবেল বলেন, “এ উপজেলায় এখনও কোনো হাসপাতাল হয়নি। এখানকার অসুস্থ রোগী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা অথবা ধর্মপাশায়। সড়কের এই বেহাল দশার ফলে রোগীদের ওইসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফলে অনেক সময় রাস্তায় রোগী মারা যায়।”
চামরদানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর খসরু বলেন, “মধ্যনগর উপজেলার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে বিভিন্ন অংশে পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হলেও কাজের গতি কম। এ পরিস্থিতিতে সড়কের বিপজ্জনক অংশে সাময়িক মেরামত করা হলে অন্তত চারটি ইউনিয়নের মানুষের চলমান দুর্দশা আপাতত লাঘব হবে।”
মধ্যনগর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহাব উদ্দিন জানান, “গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি পুনর্নির্মাণে তিনটি প্যাকেজ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজে প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, আগামী অর্থবছরে পুরোদমে সড়কটির পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তবে এই মুহূর্তে আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় সড়কে সাময়িক সংস্কার কাজের কোনো সুযোগ নেই।”
আরএন