শারদীয় দুর্গোৎসবের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার মৃৎশিল্পীরা দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর নিত্যপণ্যের পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ খরচও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে দুর্গা পূজার সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। জানা যায়, উপজেলার একটি পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নে মোট ৬২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিমাগুলোর কাঠামো নির্মাণ, বাঁশ-খড় ও কাঁদামাটি দিয়ে অবকাঠামোগত কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এখন চলছে কাঁদামাটির প্রলেপ এবং রঙের প্রাথমিক স্তরের কাজ। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিটি প্রতিমায় তুলির আঁচড় দিতে শুরু করবেন শিল্পীরা।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের কালিরহাট গ্রামের মৃৎশিল্পী বিজয় কুমার রায় জানান, তিনি তাঁর পিতা ও কাকার সঙ্গে মিলে পাঁচটি দুর্গা প্রতিমা তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। প্রতিটি প্রতিমার আকারভেদে ৩০ হাজার থেকে ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি নিচ্ছেন। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণ সরবরাহ করছেন আয়োজকরা। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার কিছুটা বাড়তি মজুরি নিতে হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা কেন্দ্রীয় শিব মন্দিরের প্রতিমা নির্মাতা মৃৎশিল্পী গোপাল রায় জানান, নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা আগেই কাজ শেষ করার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছেন পরিবারের নারী সদস্যসহ ছেলেমেয়েরাও। তিনি বলেন, গত বছর এই মন্দিরের প্রতিমা তৈরিতে ২৮ হাজার টাকা নিয়েছিলেন, আর এ বছর নিচ্ছেন ৩৭ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আনন্দ কুমার গুপ্ত ও সদস্য সচিব রতন চক্রবর্তী বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে আনন্দের বার্তা পৌঁছে গেছে। প্রতিটি মণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নজরদারি বজায় রাখা হয়েছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। এ বছর দেবী দুর্গা গজে (হাতি) আগমন করবেন এবং নৌকায় গমন করবেন।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মহিব্বুল হক জানান, উপজেলার ৬২টি দুর্গাপূজা মণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবকে সুষ্ঠু ও আনন্দময়ভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন সার্বিকভাবে কাজ করছে। এ উপলক্ষে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। অতীতের মতো এ বছরও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের নিজ নিজভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব উদযাপন করতে পারবেন—এজন্য প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এইচআর/আরএন