আফগানিস্তানে আবারও নারীদের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান। এবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারী লেখকদের বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে মানবাধিকার, যৌন হয়রানি এবং নারীবিষয়ক একাধিক পাঠ্যবিষয়ও পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যক্রম থেকে নারী লেখকদের লেখা বইগুলো সরিয়ে ফেলেছে তালেবান সরকার। পাশাপাশি মানবাধিকার ও যৌন হয়রানিসংক্রান্ত পাঠদানও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মোট ৬৮০টি বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারী লেখকদের লেখা, যেগুলোকে তালেবান কর্তৃপক্ষ “শরিয়াহ ও সরকারের নীতির পরিপন্থী” বলে চিহ্নিত করেছে। এসব বইয়ের মধ্যে ‘Safety in the Chemical Laboratory’-এর মতো বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ্যপুস্তকও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানানো হয়েছে, তারা আর ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। এক তালেবান কর্মকর্তা জানান, এসব বিষয় “শরিয়াহর মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক”।
তালেবান ২০২১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ জারি করছে। সম্প্রতি “অশ্লীলতা ঠেকাতে” দেশটির ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট পরিষেবা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী ও কিশোরীরা। ষষ্ঠ শ্রেণির পর তাদের শিক্ষাজীবন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা কোর্সও বাতিল করা হয়। এবার সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও নারী-সম্পর্কিত পাঠ্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো। নিষিদ্ধ ১৮টি বিষয়ের মধ্যে ৬টিই নারীবিষয়ক, যেমন—Gender and Development, The Role of Women in Communication, এবং Women’s Sociology।
তবে তালেবান সরকার দাবি করছে, তারা “আফগান সংস্কৃতি ও শরিয়াহর ব্যাখ্যা অনুযায়ী” নারীর অধিকারকে সম্মান করে।
বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বিবিসি আফগান বিভাগকে নিশ্চিত করেছেন, “নারী লেখকদের সব বই পড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগে বিচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি-র লেখা বইও নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, “তালেবানের নারী বিদ্বেষী নীতি দেখে এটা অনুমেয় ছিল। যখন নারীদের পড়াশোনাই নিষিদ্ধ, তখন তাদের চিন্তাভাবনা ও লেখা দমন করাটাও স্বাভাবিক।”
শুধু নারী লেখকরাই নয়, ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক পর্যালোচক বিবিসিকে বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো আফগান পাঠ্যক্রমে “ইরানি কনটেন্ট প্রবেশ ঠেকানো।” ৬৮০টি নিষিদ্ধ বইয়ের মধ্যে ৩১০টি ইরানি লেখক বা প্রকাশকের লেখা।
এক অধ্যাপক বলেন, এই বইগুলো বাদ দিলে শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। তার ভাষায়, “ইরানি লেখক ও অনুবাদকরা আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক একাডেমিক সমাজের প্রধান সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতেন। এগুলো বাদ দিলে উচ্চশিক্ষায় বিশাল ফাঁক তৈরি হবে।”
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানান, তালেবান সরকারের আরোপিত সীমাবদ্ধতার কারণে এখন তারা নিজেরাই পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় লিখতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে তার প্রশ্ন, “এসব লেখা কি বৈশ্বিক মান রক্ষা করতে পারবে?”
আরএন