বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মৃৎশিল্পীরা এখন দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হতে আর মাত্র ১২ দিন বাকি। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে উপজেলায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রতিমা তৈরির ধুম। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপূজাকে ঘিরে চারদিকে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার দুর্গাপূজার কলেবর বেড়েছে। কেন্দ্রীয় মন্দিরসহ ফকিরহাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এবছর ৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় একটি বেশি।
উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দুর্গামণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলমান। প্রতিমাগুলো কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, দড়ি দিয়ে শৈল্পিকভাবে গড়ে তুলছেন মৃৎশিল্পীরা। অনেক স্থানে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হয়ে এখন চলছে রঙ-তুলির আঁচড়ে মূর্তি রাঙানোর কাজ। একেকটি পূজামণ্ডপে গড়ে ৫টি থেকে ১০টি প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এবং অসুর ছাড়াও সিংহ, ময়ূর, পেঁচাসহ অন্যান্য সহায়ক মূর্তিগুলিও রয়েছে।
উপজেলার পালপাড়ার প্রতিমা শিল্পী অরুণ পাল, লিটন পালসহ অন্যান্যরা জানান, এ বছর প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে, কিন্তু মজুরি বাড়েনি। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই তারা প্রতিমা তৈরি করছেন, তবে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না। এছাড়া, অতিবৃষ্টির কারণে প্রতিমা তৈরিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
আকার ভেদে প্রতি সেট প্রতিমা তৈরিতে এখানকার শিল্পীরা ১৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পান। একটি পূজামণ্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করতে গড়ে ১৮ দিন সময় লাগে।
ফকিরহাট উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মনোতোষ রায় কেষ্ট বলেন, “ফকিরহাটে ৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উদযাপনে আমরা প্রশাসন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করি। ফকিরহাটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ও উৎসবমুখর ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হবে।”
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, “সরকারি বরাদ্দ আসলে আমরা পূজা উদযাপন কমিটির সভা ডাকব। সেখানে আইন-শৃঙ্খলাসহ সব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।”
এএ/আরএন