বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় অবস্থিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে নেপালের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দেশের একমাত্র স্থলবন্দর, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে পণ্য আদান-প্রদানের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে সরাসরি সড়কপথে সংযোগের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে নেপালে চলমান বিক্ষোভ-আন্দোলনের কারণে দেশটিতে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত নেপাল সীমান্ত সিল করে দিয়েছে। এতে করে বাংলাবান্ধা ও ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলেও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে।
সড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দূরত্ব প্রায় ৪৯৪ কিলোমিটার।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে কথা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যে সকল পণ্য ট্রাকে করে গত কয়েকদিনে নেপালে রপ্তানী করা হয়েছে তা ভারতের ফুলবাড়ি ও শিলিগুড়ি পানিরট্যাঙ্কি নেপাল সীমান্তে আটকা পড়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, নেপালের কাস্টমস কিয়ারেন্সের দায়িত্বে থাকা মণীশ শর্মা বলেছেন, পানির ট্যাঙ্কি নেপাল সীমান্তে বাংলাদেশ থেকে আসা যে ট্রাকগুলো আলু নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেগুলো কবে সীমান্ত পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। নতুন করে বাংলাদেশ থেকে আর সামগ্রী আমদানি-রপ্তানির ঝুঁকি কেউ নিচ্ছেন না। দু’দেশের মধ্যে লেটার অফ ক্রেডিটের (এলসি) মাধ্যমে ব্যবসা হয়ে থাকে।
জানা যায়, গত কয়েকদিনে নেপালে রপ্তানির উদ্দেশ্যে আলু, মুরগির খাবার, পাট সহ বিভিন্ন সামগ্রী বোঝাই করে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে গেছে বাংলাদেশের ট্রাকগুলো। তারপর আটকে যায় ফুলবাড়ি স্থলবন্দরেই। নেপালে এখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে সামগ্রী নিতে আর ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে বেশ কিছু নেপালের ট্রাক আসে। কিন্তু তারা পণ্য নিয়ে নেপাল আর যেতে না পেরে ভারতে আটকা পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে ভারতের ফুলবাড়িতে নেপালে রপ্তানীর জন্য ৩০টিরও বেশি ট্রাক পণ্য দিয়ে যায়। স্থলবন্দরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাংলাদেশে ২০টি ট্রাক সামগ্রী বোঝাই অবস্থায় রপ্তানির জন্য অপেক্ষা করছে। ভারতে ঢুকতে পারছে না।
ট্রাকচালকদের দাবি, নেপালে অস্থির পরিস্থিতির জন্য তাঁদের বাণিজ্য ক্ষতির মুখে। ব্যবসায়ীরা রপ্তানির জন্য সামগ্রী কিনে ট্রাকে তুলে পাঠিয়েছেন। নেপালে সেই জিনিসপত্র রপ্তানি করা সম্ভব না হলে ফেরত নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেখানকার শ্রমিকরা জানায়, ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশ ও নেপালের আমদানী রপ্তানী ব্যবসা চলে। নেপাল থেকে রোজ অন্তত ৫০টি ট্রাক স্থলবন্দরে এসে বাংলাদেশ থেকে আসা সামগ্রী বোঝাই করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের আলু, মুরগির খাবার, পাট, প্যাকেটজাত খাদ্য, কাপড় ও রেক্সিন ইত্যাদি। বাংলাদেশের আলু নিয়ে নেপালের কয়েকটি ট্রাক রওনা দিলেও শিলিগুড়ি পানির ট্যাঙ্কির নেপাল সীমান্তে আটকে গিয়েছে। তবে বাংলাদেশের ট্রাকগুলো পণ্য ভারতে খালাশ করে দিয়ে ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশের দিনাজপুর থেকে মুরগির খাবার বোঝাই ট্রাক নিয়ে বাংলাবান্ধা দিয়ে ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে প্রবেশ করে দু’দিন ধরে আটকে ছিল বাংলাদেশের ট্রাক চালক রফিক সরকার। তিনি ফিরে এসে জানান, নেপাল থেকে ট্রাক না আসলেও ভারতীয় ট্রাকে পণ্য উঠিয়ে দেয়া হয়। এমন ৭টি ট্রাক বাংলাদেশে ফিরেছে।
এদিক গত দুইদিন ধরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের টার্মিনালে নেপালে আলু ও পাট রপ্তানির জন্য ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা করছেন বেশ কিছু চালক। চালক ফরিদ আহমেদ ও বুলবুল শেখ বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে ট্রাকে পণ্য নিয়ে ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দর টার্মিনালে গিয়ে এই পণ্য নেপালের ট্রাকে উঠিয়ে দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ফিরে আসি। কিন্তু বর্তমানে নেপালের যে অবস্থা তাতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে টার্মিনালে ২০টি পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আমরা আটকা পড়েছি। ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখার অনেক খরচ। লোকসান হবে প্রচুর।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলা হলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান পণ্য রপ্তানী এবং বাংলাদেশে আমদানী স্বাভাবিক রয়েছে। তবে নেপালে রপ্তানীযোগ্য পণ্য এখন আর অনুমতি দেয়া যাচ্ছে না। ফলে শনিবার পর্যন্ত (১৩ সেপ্টেম্বর) নেপালে রপ্তানীর জন্য ২০টি পাট ও আলু বোঝাই ট্রাককে ছাড় দেয়া সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নেপালে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানী আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
এসআইএস/এসআর