আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় মুন্সীগঞ্জের তিনটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শোডাউন ও দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে উত্তাপ ও উত্তেজনা। বিরোধী আন্দোলনের সময় মাঠে থাকা প্রার্থীরা আবার সক্রিয় হয়েছেন। অনেকদিন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা নেতারাও এখন এলাকায় আসা-যাওয়া শুরু করেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিজেদের পক্ষে টানতে ব্যস্ত তারা।
নেতাকর্মীরা বলছেন, ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারও বিএনপিকে ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে হবে। নাহলে জাতীয় নির্বাচনেও খেসারত দিতে হতে পারে।
বিএনপির দুর্গ মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। তবে আওয়ামী লীগ গত ১৫-১৬ বছর এই অঞ্চলে বিতর্কিত নির্বাচন, আগাম ভোট, রাতের ভোট ও জোরজবরদস্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিল—এমন অভিযোগ রয়েছে। দখল প্রতিযোগিতার কারণে নতুন ভোটারদের একটি অংশ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যদিও এখানে আওয়ামী লীগেরও একটি ভোট ব্যাংক আছে।
নির্বাচনী বিশ্লেষণে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জে নারী ভোটারদের কাছে ধানের শীষ প্রতীক সবচেয়ে জনপ্রিয়। গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটের কারণে বিএনপি এগিয়ে থেকেছে। পুরুষ ভোট বিভক্ত হলেও নারী ভোটেই বিএনপি জয়লাভ করেছে।
এ জেলায় জামায়াতের কিছু ভোট রয়েছে। তবে এনসিপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দলের তেমন প্রভাব নেই। তারপরও আসন্ন নির্বাচনে জামায়াত একটি ফ্যাক্টর হতে পারে।
বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন
মুন্সীগঞ্জ বিএনপি বর্তমানে অভিভাবক সংকটে ভুগছে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পাঁচবারের সাবেক এমপি আব্দুল হাই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বর্তমান আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সিনহা ২০২০ সালে দল থেকে পদত্যাগ করলেও ২০২৫ সালে আবার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হন। এরপর কেন্দ্র থেকে মহিউদ্দিনকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই কমিটি সম্প্রসারণ করে ৫৯ সদস্য করা হয়। তবে বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে অনেকের মধ্যে। বিশেষ করে মেজর (অব.) মাসুদুর রহমান কাইয়ুমকে আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা নিয়ে তীব্র সমালোচনা আছে। অভিযোগ রয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনা ক্যাম্পে থেকে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছিলেন। তবে আব্দুল হাইয়ের অসুস্থতার পর তার ভাই মহিউদ্দিন বিরোধী আন্দোলনের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে আন্দোলনে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা মুন্সীগঞ্জে এসেছিলেন। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, এবার মনোনয়ন পেতে হলে রাজপথে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাদেরই অগ্রাধিকার দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী
জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, মুন্সীগঞ্জে মোট ভোটার ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৩, নারী ভোটার ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮১ এবং হিজড়া ভোটার ৪ জন।
মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান):
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী—ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, শিল্পপতি শেখ মো. আব্দুল্লাহ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মমিন আলী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা সেক্রেটারি এ কে এম ফখরুদ্দিন রাজি। গণঅধিকার পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাহিদুর রহমান এবং ইসলামী আন্দোলনের কে এম আতিকুর রহমানও লড়াইয়ে আছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গীবাড়ী):
এ আসনে বিএনপি থেকে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী আলোচনায়—সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। জামায়াতের প্রার্থী সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করিম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আবদুল্লাহ সাঈদও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া):
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী—কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও সাবেক সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, রামপাল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, শিল্পপতি মোশাররফ হোসেন পুস্তি এবং প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম বাবু। তবে বাবুর এলাকায় যোগাযোগ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। জামায়াতের প্রার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গণিত বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকেও সাংবাদিক শেখ মো. শিমুলের নাম শোনা যাচ্ছে।
এসআর