রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবার ও বাড়িতে তৌহিদী জনতার হামলা, ভাঙচুর ও কবর থেকে লাশ উঠিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার জুমার পর গোয়ালন্দ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আনছার ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের ওই বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন ভক্ত আহত হন।
এর আগে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন আনছার ক্লাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন গোয়ালন্দ উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা জালাল উদ্দিন, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী খান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মণ্ডলসহ বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ।
শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের দিকে যেতে চাইলে প্রশাসন তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়। একই সঙ্গে পাঁচ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের দুজন আহত হন। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা নুরাল পাগলের বাড়ি ও দরবারের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভবন ও দরবার শরিফে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে সেনাবাহিনী ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে পাশের পদ্মার মোড় এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস থেমে থেমে কাজ করছে।
এদিকে এই কর্মসূচিকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ আলেম-ওলামা ও দরবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক সভা করে। আলেম-ওলামাদের দাবিগুলো দরবার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম দরবার শরিফ পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা জানান, দরবার কর্তৃপক্ষ শর্ত পূরণ করেছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান জানান, “আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বাড়ি ও দরবারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ সময় আমার গাড়িসহ পুলিশের দুইটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আহতের সংখ্যা এখন বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও র্যাব রয়েছে এবং পরিস্থিতি থমথমে।”
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, “এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটবে তা আমরা ধারণাই করতে পারিনি। কারণ উভয় পক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বসে সমাধান করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে নিবৃত করতে গেলে আমরা হামলার শিকার হই। এ সময় আমি ও রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিব আহত হই। এছাড়া পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে রাজবাড়ীর এসপির নেতৃত্বে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।”
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম জানান, “ইতিমধ্যে আমাদের হাসপাতালে ২২ জন আহত রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১৯ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
এসআই/আরএন