নীলফামারীর জলঢাকার নদীগুলোতে গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বন্যার পর পানি নেমে গিয়ে এখন পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ বেড়েছে তিস্তাসহ নদীপাড়ের মানুষের। রোপা আমন ক্ষেত নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হওয়ায় কপালে দুঃচিন্তার ভাঁজ পড়েছে নদীপাড়ের মানুষের।
কয়েক দফায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তিস্তাসহ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পায়। এতে ডুবে যায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের ফসলি ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েন উপজেলার অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার। একইসঙ্গে পানির তোরে ভেসে গেছে মৎস্য চাষিদের পুকুরের মাছ। বিশেষ করে আমন ক্ষেত ও বীজতলা ডুবে যাওয়ায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তিস্তাসহ নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন নদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীসমূহে পানি কমতে শুরু করায় আবার আগের রুপে ফিরে যাচ্ছে। নদীপাড়ের জমিতে শুধু মাটি বালু পড়ে রয়েছে, নেই কোনো আমনের চারা। ফলে আমন নিয়ে দুঃচিন্তার ভাঁজ পড়েছে তিস্তাসহ নদীপাড়ের কৃষকের কপালে।
এদিকে, বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ কমেনি নদীপাড়ের মানুষের। পানির তোড়ে নষ্ট হওয়া ঘর-বাড়ি, বেড়া মেরামত করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বন্যার পানির সাথে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনার স্তুপ ঢুকে পড়েছে বাড়িতে বাড়িতে। ঝোঁপ ঝাঁড়ে আশ্রয় নিয়েছে সাপ, পোকামাকড়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যায় জেলার ৬১৫ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত ও ৫০ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
যদিও কৃষি বিভাগের এ তথ্য মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তাদের মতে, শুধু নদীপাড়ে বন্যায় ফসল ক্ষেত ডুবেনি। টানা ভারি বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের জমি ডুবেছে। ফলে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি বলে দাবি কৃষকদের।
উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক শহীদ মিয়া বলেন, 'কয়েকদিন আগে একবার বন্যায় ডুবে গিয়ে আমার আড়াই বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছিল। অনেক কষ্টে চারা সংগ্রহ করে দ্বিতীয় দফায় রোপণ করেছিলাম। সেটাও এক সপ্তাহের ব্যবধানের বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হলো। এখন আবার চারা কিনব কিভাবে জানিনা। পরিবারের জন্য কি খাবার ফলাবো তাও জানিনা।'
সাইফুন বাজারের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'বন্যা আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে। এমনিতেই এখন চাষাবাদে অনেক খরচ। তার ওপর বার বার বন্যা। চাষাবাদ করে আমরা লাভের মুখ দেখতে পারি না। যা আবাদ করি, ঠিকমতো তার দাম পাই না। কিন্তু এবারের বন্যায় আমাদের সবকিছু শেষ করে দিল। সামনে দিনগুলো কেমন যাবে, আমরা কিভাবে বাঁচবো, সেটা কেউই জানি না।'
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের মশিউর রহমান বলেন, 'এবারের বন্যায় কৃষকের ক্ষতি হয়েছে পাশাপাশি নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে অনেক মানুষ। গত এক সপ্তাহে অন্তত ১০ বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও অনেক আবাদি জমি।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, 'বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমনের চারা রোপণের এখনও সময় রয়েছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, 'নদীর পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নদীতে ভাঙনের শঙ্কা আছে। সেই থেকে ভাঙন রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে নদীপাড়ে।'
এইচএস/এমএ