অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তাল রয়েছে তিস্তা নদী। গতকাল ১৩ আগষ্ট সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদ সীমা (৫২.১৫ মিটার) এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ (১৪ আগষ্ট) দুপুর ১২টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১৮ সে. মিটার উপর দিয়ে (৫২.৩৩ মি.) প্রবাহিত হচ্ছিল।
প্রবল স্রোতে প্লাবিত হচ্ছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী আরো নতুন নতুন এলাকা। ডুবে গেছে ধান ও সবজির খেত। ভেসে গেছে চাষিদের পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় সহস্রাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ী।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের বন্যাকবলিত পশ্চিম ইচলী ও শংকরদহ গ্রাম এবং মর্নেয়া ইউনিয়নের নিলারপাড় এলাকার পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পানিবন্দি ৩টি ইউনিয়নের পরিবারগুলোর মাঝে ৯.৪ মে.টন চাল বরাদ্দ প্রদান করেন। পরিদর্শন কালে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিম, লক্ষীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদীসহ ইউপি সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী, কোলকোন্দ, মর্নেয়া, গঙ্গাচড়া, গজঘণ্টা, নোহালী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্ত্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানি ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ও ভেলার ওপর নির্ভর করছে জলবন্দি মানুষজন।
লক্ষিটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লা আল হাদী জানান, ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, মধ্য ইচলি, পূর্ব ইচলি, জয়রাম ওঝা, শংকরদহ ও চল্লিশ সাল এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
গজঘন্টা ইউপি চেয়ারম্যান (প্যানেল) বকুল মিয়া ইউনিয়নের কালির চর, চর ছালাপাক ও চর রাজবল্লভ এলাকার প্রায় ১৫০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান (প্যানেল) শরিফুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের বিনবিনা, শখের বাজার, খলাইর চর, মটুকপুর, আবুলিয়া, চিলাখাল এলাকার প্রায় ২৫০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
মর্নেয়া ইউপি প্রশাসক মাহমুদুর রহমান জানান, ইউনিয়নের চর মর্নেয়া, নরসিংহ, রামদেব, কামদেব, নিলারপাড়া এলাকার প্রায় ৩৫০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, ইউনিয়নের চর নোহালী, চর বাগডহরা, চর বৈরাতি, মিনার বাজার, ব্রিফ বাজার ও আশ্রয়ন বাজার এলাকার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।
আলমবিদিতর ইউপি প্রশাসক আবতাবুজ্জামান জানান, ইউনিয়নের পাইকান হাজীপাড়া ও ব্যাঙপাড়া এলাকার প্রায় ৫০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ফসলি জমি, বাড়িঘর, মাছ চাষের পুকুর, রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজিবুল করিম জানান, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বন্যার্ত পরিবারগুলোর মাঝে আজ (বৃহস্পতিবার) ত্রাণের চাল প্রদান করা হয়েছে। এপর্যন্ত লক্ষ্মীটারী, মর্নেয়া ও কোলকোন্দ ইউনিয়নের বন্যার্তদের জন্য ৯.৪ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্লুইচ গেট খোলা হয়েছে। নদীতীরবর্তী জনগণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এএমএম/এসআর