লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের বাঁশকল থেকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগামী আঞ্চলিক সড়কটির বেহাল দশা। প্রায় দুই কিলোমিটার এ সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে চলাচলের অনুপযোগী। স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দুর্ভোগ রোধে ও সড়কটি মেরামতের জন্য সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে স্থানীয় এলাকাবাসি ও শিক্ষার্থীরা আঞ্চলিক সড়কটিতে মানববন্ধন করে ও বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়ক এক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এতে শত শত যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন এ পাকা সড়কটি ২০১৬ সালের জুন-জুলাই মাসে খানাখন্দে বেহাল হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসে সড়কটি সংস্কারে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ১৬ লাখ টাকা জোগাড় করে বালু, পাথর ও ইটের খোয়া ফেলে কোনোরকমে চলাচলের উপযোগী করে। এরপর ৩ বছর গত হলেও সরকারিভাবে কোনো কাজ করা হয়নি। এতে আবারও গর্তের সৃষ্টি হয়। আবারও ২০২৪ সালের জুন-জুলাই মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা তুলে সড়কের গর্তগুলো ভরাট করা হয়। বর্তমানে পুরো সড়কে আরো গর্ত হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারাসহ শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করে।
এ রাস্তাটি দিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড অংশের উফামারা, বড়তেলীপাড়া, কামারেরহাট, বেঙ্গেরবাড়ী, নাটারবাড়ী, ষোলঘরিয়া, বামনদল, মাছির বাজার, হাদিসপাড়া, ছোটতেলীপাড়া, প্রধানপাড়া, বড়বাড়ি, পঞ্চারভিটা, ঠাকুরপাড়া ও মেডিকেল মোড় ছাড়াও অন্তত ২০ টি এলাকার বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে চলাচলের মূল সড়ক এটি। স্থানীয়দের মতে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের সদস্যরা এ সড়ক ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও বিকল্প সড়ক হিসেবে অন্যান্য এলকার আরো কয়েক হাজার লোকজন চলাচল করে থাকে।
এ সড়ক দিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থানীয় বিভিন্ন রোগী ও গর্ভবতী মায়েরদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়। সম্প্রতি গর্ভবতী এক মায়েকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় অটোভ্যান উল্টে গর্ভপাত ঘটে সন্তান মারা যায়। একই সড়ক দিয়ে তিনবছর আগে স্কুল পড়ুয়া সন্তানকে আনতে গিয়ে ভাঙ্গা গর্তে পড়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে একজন অভিভাবকেরও মৃত্যু ঘটে।
সড়কটি দিয়ে বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আলীমুদ্দিন ছবুর উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সফিয়ার রহমান রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বুড়িমারী আলিম মাদ্রাসা, আমানতুল্লাহ প্রধান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গ্রন্থিবন্ধন শিশু নিকেতন ও উদয়ন শিশু নিকেতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী চলাচল করে থাকে।
সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, পুরো সড়কে গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতে এসব গর্তে পানি জমে কাদামাটিতে একাকার হয়ে গেছে। এতে পথচারী, শিক্ষার্থী, অটোরিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস আরোহী, পণ্যবাহী ট্রাক, কার্গোসহ অন্যান্য যান চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে।
আমানতুল্লাহ প্রধান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, ‘এ রাস্তার জন্য আমাদের অনেক কষ্ট হয়। কাদার উপর দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।’
বুড়িমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা রমজান আলী ফেরদৌস বলেন, ‘বর্ষায় রাস্তার গর্তে বৃষ্টির পানি জমে কাদা হয়; এর ফলে একদম চলাফেরা করা যায়না। কাদার কারণে কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়।’
বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানিকারক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল মোড় এলাকা থেকে বাঁশকল পর্যন্ত রাস্তাটির কারণে হাজার হাজার মানুষের কষ্টের শেষ নেই। বছরের পর বছর রাস্তাটি এভাবে থাকলেও কেউ ফিরে তাকায়নি।’
বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটির একদম বাজে অবস্থা। রাস্তাটি দিয়ে শত শত শিক্ষার্থী চলাচল করে। রাস্তাটির পুনঃনির্মাণ জরুরী।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম রিফাত বলেন, ‘রাস্তাটির ব্যাপারে জানি। এটি দ্রুত সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব হবে।’
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দরের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক। সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় স্থানীয়রা মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করে। আমি গিয়ে দ্রুত পুনঃনির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।’
এসআর