নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সেই আস্থা ফিরিয়ে মানুষকে কেন্দ্রমুখী করা এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে—এ মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, মানুষ তো ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অভ্যাসটাই ভুলে গেছে। ভোটের দিন ছুটি থাকে, তখন কেউ কেউ ভাবেন—আমি ঘুমাই, আমি না গেলেও তো কেউ না কেউ ভোটটা দিয়ে দেবে। এমন একটা মানসিকতা তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে সবাইকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে—এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, দৃশ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে আইনশৃঙ্খলা। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের পর দেশে যে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা মাথায় রেখেই বলতে হয়—এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই আমরা আশাবাদী যে, এটি মোকাবিলা করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের নিয়েও কিছু পরিবর্তন আসবে। আগের মতো সব জায়গায় শিক্ষকদের নিয়োগ নাও হতে পারে, আমরা বিকল্প চিন্তা করছি। কারণ বিদেশ থেকে তো মানুষ এনে নির্বাচন করানো যাবে না—দেশের লোক দিয়েই করতে হবে। তাই যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়েই সামলাতে হবে।
সিইসি বলেন, এ দেশে আগেও সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। মানুষ যদি দেখে এখানে কোনো কারচুপি নেই, যদি বুঝতে পারে কমিশন সত্যিই একটি সুন্দর নির্বাচন করতে চায়, তাহলে মানুষ আমাদের পাশে থাকবে।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হচ্ছে এবং নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, তা আরও ভালো হবে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যাতে মানুষ নির্ভয়ে, শান্তিপূর্ণভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকে নিজের "ঈমানি দায়িত্ব" হিসেবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমি ও আমার সহকর্মীরা এটাকে ঈমানি দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। আমার কোনো সিদ্ধান্ত কারো পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে—কিন্তু সেটা আমার কারণে নয়, বরং আইন-কানুন অনুযায়ী। যতক্ষণ আমি সচেতন, ততক্ষণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাব।
এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অস্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। মানুষের ছবি ও কণ্ঠ ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য তৈরি করা হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ ধরতে পারছে না। অনেকে রাতে শুয়ে এইসব ভিডিও দেখে ভাবছেন, এটা হয়তো সত্যি। অথচ যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি জানেন না; যিনি বলছেন, তিনিও আসল না!
তিনি আরও বলেন, এমন বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, আমরা তা নিয়ে ভাবছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব যাচাই-বাছাই ছাড়াই কয়েক হাজারবার শেয়ার হয়ে যায়। যার সম্পর্কে এইসব ছড়ানো হয়, তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর অঞ্চলের সব অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সভায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
আরএন