Monday | 27 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Monday | 27 October 2025 | Epaper
BREAKING: জ্বালানি সংকটে মালিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা      উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল চলাচল শুরু      ড্যাফোডিল-সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাংচুর-যানবাহনে অগ্নিসংযোগ       এল ক্লাসিকোয় রিয়ালের জয়      মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি      মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রো চলাচল শুরু      ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১,১৪৩ জন      

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে অবৈধ বাল্কহেড, ৮ বছরে নিহত ৩৯

Published : Thursday, 7 August, 2025 at 9:08 PM  Count : 183

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মুন্সীগঞ্জ জেলার নদীপথে প্রতিদিনই রাতের বেলা অবাধে চলাচল করছে হাজারো বালুবাহী বাল্কহেড। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ধলেশ্বরী, মেঘনা, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ও ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে নিয়মিত দেখা যায় এসব নৌযান।

চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করে এসব বাল্কহেড মুন্সীগঞ্জের নদীপথ ব্যবহার করে ঢাকামুখী যাত্রায় অংশ নেয়। ফলে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর বালুবাহী বাল্কহেডগুলোর প্রধান পথ হয়ে উঠেছে ধলেশ্বরী ও মেঘনা।

নৌ-দুর্ঘটনা রোধে ৯ বছর আগে রাতের বেলায় বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে নিষেধাজ্ঞা মানার কোনো নমুনা নেই। রাতের অন্ধকারেই এ বিপজ্জনক নৌযানগুলো চলাচল করে, যা প্রায়ই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গত ৮ বছরে এই নদীপথে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৯ জন। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনিক নজরদারি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ দাবি করছেন সচেতন মহল।

অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট জেলার নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব বাল্কহেডগুলো অবাধে চলাচল করে। এর ফলে গত ৮ বছরের ব্যবধানে ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীতে একাধিক নৌ-দুর্ঘটনায় পুলিশ কনষ্টেবল ইব্রাহিম হোসেন, লঞ্চযাত্রী খোরশেদ আলম, ট্রলার যাত্রী ও ২৩ শ্রমিকসহ ৩৯ নিহত হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক। অল্পের জন্য রক্ষায় পায় প্রায় ৫ শতাধিক লঞ্চ যাত্রী।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরে অবৈধ নৌ-যানগুলোর কোন ধরনের কারিগরী নকশা ছাড়াই মিস্ত্রি ও ওয়েল্ডারের পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হচ্ছে। আর যারা নৌ-যান তৈরীর সঙ্গে জড়িত, তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। অশিক্ষিত পেশাজীবী গোষ্ঠীই এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডকইয়ার্ড গুলোরও কোন বৈধ অনুমতির কাগজপত্র নেই। এমনকি এসব নৌ-যানের কোন হুইল থাকে না। নৌকার মতো হালের সাথে একটি লম্বা স্টিলের পাত বা কাঠের খুঁটির মতো বস্তু ব্যবহার হয়ে থাকে হুইলের বিকল্প হিসেবে। চালক নৌযানের ছাদে বসে কখনো পা দিয়ে, কখনো হাত দিয়ে নৌযান চালিয়ে থাকে।

মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, ধলেশ্বরী, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ৬ থেকে ৭ হাজার কার্গো ও বাল্কহেড চলাচল করে। মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে কয়েকটি বালু মহাল রয়েছে। এছাড়া ইজারা বিহীন অবৈধভাবে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হয়। আর এই উত্তোলিত বালু বহনের করে হাজার হাজার বাল্কহেড দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। দিনের বেলায় বাল্কহেড চলাচলে নিরাপদ হলেও রাতের বেলায় নৌ-দুর্ঘটনার প্রধান বাঁধা হওয়ায় মুন্সীগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন রাতে বেলায় বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই রাতের বেলায় চলাচল করছে বালুবাহীসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী বাল্কহেড গুলো। ফলে গত ৩ বছরে ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীতে একাধিক নৌ-দুর্ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল ইব্রাহিম, লঞ্চযাত্রী ও ট্রলার যাত্রী ও ২৩ শ্রমিকসহ ৩৯ নিহত হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক। অল্পের জন্য রক্ষায় পায় প্রায় ৫ শতাধিক লঞ্চ যাত্রী।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সন্ধ্যা রাতে মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৬ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ৬ নভেম্বর ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর মোহনায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ও কয়লা বহনকারী বাল্কহেডের সংঘর্ষে ৯ শ্রমিক আহত এবং কয়েকদিন পরই ধলেশ্বরী নদীতে বরগুনাগামী এমভি মানিক-৯ লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লঞ্চটি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় ৪০০ লঞ্চযাত্রী। ১৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ-নারায়নগঞ্জ নৌরুটের ধলেশ্বরী নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও বালুবাহী বাল্কহেডের সংঘর্ষে খোরশেদ আলম নামের এক যাত্রীর মৃত্যু হয় এবং অল্পের জন্য রক্ষা পায় শতাধিক লঞ্চযাত্রী। ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি সদর উপজেলার চরআব্দুল্লাহপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌ-পুলিশের ট্রলার ডুবিতে ইব্রাহিম নামের এক পুলিশ কনস্টবলের লাশ উদ্ধার, ৩০ এপ্রিল মেঘনা নদীতে ঢেউয়ের কবলে ইটবোঝাই ট্রলার ডুবিতে রফিজউদ্দিন মিয়া নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ১৮ আগস্ট মেঘনা নদীর মোহনায় গ্রীনলাইন-২ লঞ্চের ঢেউয়ের কবলে ইটবাহি একটি ট্রলার ডুবে গেলে ১০ শ্রমিককে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। ২০১৯ সালে পৃথক দুইটি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৩ শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাল্কহেড, কার্গো, ড্রেজার ও ট্রলারসহ নানা নৌযান তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। যেসব প্রতিষ্ঠানে এসব নৌযান তৈরী হচ্ছে, তাদের নেই বৈধ কাগজপত্র। এমনকি নৌযানের নকশায়ও রয়েছে মারাত্মক ত্রুটি। এছাড়া এ ধরণের নৌযান সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন নৌ দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম কারণ হওয়ায় মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন বাল্কহেড সমিতির সঙ্গে এক বৈঠকে রাতের বেলায় বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু তা অমান্য করেই রাতের বেলায় বাল্কহেড ও কার্গো চলাচল করছে। বাল্কহেড চলাচলের ওপর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাতের বেলায় নৌ-পুলিশের সঙ্গে কোস্টগার্ডকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা তোয়াক্কা না করেই রাতের বেলায় বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল করছে। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে শাস্তি ও জরিমানা করা হচ্ছে। এমনকি বাল্কহেড মালিক পক্ষকে নিয়ে সভা-সেমিনার করে সতর্ক করা হলেও পরে তারাই আইন অমান্য করে অবৈধ নৌযান চালাচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা বাল্কহেড মালিক সমিতি সূত্র জানায়, সমিতি আছে, কিন্তু কার্যক্রম নেই। দুই বছর আগে সমিতির সভায় রাতের বেলা বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে আইন আছে, বড় আকারের কার্গো বডি রাতে নৌপথে চলাচলে কোন বাঁধা নেই। ছোট আকারের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের বেলায় অবৈধ এ নৌযান চালানো হলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর
সম্পর্কিত   বিষয়:  মুন্সীগঞ্জ  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close