পঞ্চগড়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে জাবেদ উমর জয় (১৯) নামে এক ছাত্রদল কর্মী ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় রাস্তা অবরোধ করে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়। রাস্তার দুপাশে বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। সাধারণ লোকজনকেও তারা চলাচলে বাধা দেন।
রাস্তা অবরোধ করার কারণে করতোয়া সেতু থেকে মিলগেট বাজার পর্যন্ত এবং চৌরঙ্গী মোড় থেকে তেতুঁলিয়া বাসষ্ট্যান্ড বাজার পর্যন্ত শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এসময় তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে হুশিয়ারি দেন পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বুধবার (৬ আগস্ট) রাত ৯ টার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরের সিনেমা হল মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে ছুরি দিয়ে জাবেদ উমর জয়কে খুন করে। নিহত জয় জেলা শহরের পুরাতন ক্যাম্প এলাকার মৃত জহিরুল হকের ছেলে। তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের কর্মী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় রাত থেকেই জেলা শহরে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে আশেপাশের দোকান পাট বন্ধ করে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে শহরের পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে বিক্ষোভ করে তার প্রতিবেশী, সহপাঠী ও বন্ধুরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যসহ অতিরিক্ত পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়। এ ঘটনায় মধ্যরাত পর্যন্ত শহরে থমথমে অবস্থা ছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে খুনের ঘটনায় ছাত্ররা অপরাধীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শইমী ইমতিয়াজ এসে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেয়ার আহবান জানান।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শইমী ইমতিয়াজ অবরোধের সময় ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আমরা জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় শোকাহত। জয়ের খুনিদের গ্রেফতার করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করতে পারবো। আমরা ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতারও করেছি।
পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন এবং মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখানে জেলা প্রশাসকের নিকট ঘুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামও দেন। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাবেত আলী খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে তাদেরকে আশ্বাস প্রদান করেন।
খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে বিপি সরকারি স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জাবেদ উমর জয়কে ছুরিকাঘাত করা হয়। সেখানে তার প্রতিপক্ষ জেলা শহরের নতুনবস্তী এলাকার আল আমিন, পারভেজসহ কয়েকজন ছিল। স্থানীয়রা গুরুতর আহতাবস্থায় জয়কে উদ্ধার করে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। গভীর রাত পর্যন্ত তার মরদেহ বাসাতেই ছিল। জয়ের পেটে বাম পাশে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। হাতে চোট লাগে।
জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের আঘাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আল আমিন ও পারভেজসহ কয়েকজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জয়ের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বাদ জোহর জানাজা শেষে জয়ের মরদেহ দাফন করা হবে।
পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্ল্যা হিল জামান একজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এসআইএস/এসআর