কুমিল্লার হোমনা উপজেলা সদর থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত সওজের ১৪ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। এসব খানাখন্দ চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে এবং মানুষের জীবন-মরণের ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ ও কংক্রিট উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্ত। ভারী বর্ষণের ফলে এসব গর্তে পানি জমে থাকায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। সড়কটি দেশের রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহর কুমিল্লা যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। এর ফলে, এ সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে হোমনা, তিতাস, ও মুরাদনগর উপজেলার অর্ধলাখ মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কে যাতায়তকারীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সড়কটি হোমনা উপজেলা সদর থেকে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ সড়কে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই চলছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ও মোটরসাইকেল। এসব যানবাহন ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। সড়কের এই বেহাল দশায় ভোগান্তিতে রয়েছেন হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার অর্ধলক্ষ মানুষ। গত কয়েক বছরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি একেবারে বেহাল হয়ে পড়েছে। রাস্তার এই অবস্থার কারণে যাত্রীদেরও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। অনেক গর্তে পানি জমে রয়েছে। অনেক জায়গায় গর্তের কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। বিশেষ করে হোমনা চৌরাস্তা, মীরশিকারি, শ্রীপুর, ঘাড়মোরা, কৃষ্ণপুর, কাশিপুর, ওমরাবাদ ও রঘুনাথপুর এলাকায় রাস্তার বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে, যার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় যানবাহনের চালকরা গতি কমিয়ে যাতায়াত করছেন।
সিএনজি চালক মো. সবুজ মিয়া বলেন, "আমার বাড়ি হোমনা পৌরসভার শ্রীমদ্দি গ্রামে। বহু বছর ধরে হোমনা চৌরাস্তা থেকে হোমনা-মুরাদনগর সড়কের কাশিপুর রাস্তায় সিএনজি চালাই। রাস্তাটি ভাঙাচোড়া হওয়ায় আমরা গাড়ি চালাতে পারি না। প্রায় ৮ বছর ধরে রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। চলতে গিয়ে যাত্রীসহ অনেকবার সিএনজি, অটোরিকশা উল্টে দুর্ঘটনায় পড়েছি। গাড়ি ভেঙেছে অনেকবার, যাত্রীরাও আহত হয়েছেন। অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখনও হচ্ছে।"
রিকশাচালক আলা উদ্দিন বলেন, "আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। উঁচু-নিচু ভাঙা রাস্তা, বড় বড় গর্ত, তিন চাকার রিকশা নিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। কিন্তু প্যাসেঞ্জার উঠতে চায় না। রিকশাই আমার একমাত্র আয়-রোজগারের উৎস। ঠিকমতো প্যাসেঞ্জার টানতে না পারলে কষ্টে কোনোমতে জীবন চলে। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।"
ঘাড়মোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, "এ রাস্তাটি ২০১৬ সালে একবার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংস্কার করেছিল। কিন্তু এখন হোমনা থেকে কাশিপুর পর্যন্ত রাস্তাটি খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। কোনো যানবাহন বা মানুষও ঠিকমতো চলতে পারে না। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। আমি ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনিও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, কিন্তু এখনও কিছু হয়নি। মাঝে একবার আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘাড়মোড়া বাজার সংলগ্ন রাস্তাটি মাটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে মেরামত করেছিলাম।"
হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, "হোমনা কাশিপুর পর্যন্ত সড়কটি নিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা করেছি। বলার পর তারা বিভিন্ন সময় ছোটোখাটো মেরামত করেছে, কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। এই রাস্তায় জরুরি ভিত্তিতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ প্রয়োজন।"
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গৌরীপুর সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ভুঞা বলেন, "এ রাস্তার টেন্ডার হয়ে গেছে, এখন কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন। খুব শিগগিরই পুরো রাস্তায় কাজ শুরু হবে। এবং যেখানে চরম বিপর্যয়, গাড়ি চলতে সমস্যা হয়, সেখানে ট্রাক পাঠানো হবে। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যাদেশটি শুরু হবে। অর্থাৎ আগস্টের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।"
কেএইচ/আরএন