পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পূর্বশত্রুতার জেরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি ও যুবদলের কর্মীদের হামলায় ‘নয়া শতাব্দী’ ও ‘দ্য ডেইলি পোস্ট’-এর উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক সিয়াম রহমান হিমেলসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক ও আহত সাংবাদিক হিমেল ওই রাতেই মির্জাগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ বিএনপি ও যুবদলের ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
আহত সাংবাদিক সিয়াম রহমান হিমেল জানান, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলা বিএনপির সদস্য জনি মুন্সী তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আমাকে অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দেন, কিন্তু আমি তা প্রত্যাখ্যান করি। এরপর থেকে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেজান জাকির ও তার সহযোগীরা গত ৬-৭ মাস ধরে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এ বিষয়ে আমি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জানাই এবং থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দেই, যার পরপরই সেজান জাকিরসহ অন্যান্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে উপজেলা বিএনপির আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালির সংবাদ সংগ্রহের সময়, র্যালিটি সুবিদখালী বাজার সেতু অতিক্রম করার সময় সেজান জাকিরসহ ৭/৮ জন ব্যক্তি আমার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় এবং আমাকে রক্তাক্ত জখম করে। আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা আরও ৪ জনকেও তারা মারধর করে। আহতদের মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে পুনরায় হামলার চেষ্টা চালায়।
এ ঘটনায় সাংবাদিক হিমেল বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহিদ হাসান ওরফে পরাগ মুন্সীকে প্রধান আসামি করে, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সৌরভ মুন্সী ও উপজেলা বিএনপির সদস্য জনি মুন্সীসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
সেনাবাহিনী ক্যাম্প থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাংবাদিক হিমেলকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা ব্যক্তিদেরও আসামিরা মারধর করে, ফলে মোট ৫ জন গুরুতর এবং সাধারণ আহত হন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর মির্জাগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল ও মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান চালায়। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালানোর চেষ্টা করে।
এ সময় মামলার ১ নম্বর আসামি মো. জাহিদ হাসান ওরফে পরাগ মুন্সী (৪০) দেশীয় অস্ত্রসহ ঘটনাস্থল থেকেই আটক হন। এছাড়া যৌথ অভিযানে ২ নম্বর আসামি সৌরভ মুন্সী (৩৫) ও ৩ নম্বর আসামি জনি মুন্সী (৩৬) নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন।
মির্জাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, সাংবাদিক হিমেল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যৌথ বাহিনীর অভিযানে মামলার প্রধান আসামিসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এমপি/আরএন