গত শনিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করলেও রোববার সকাল থেকে পানি কমে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সেই পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে পানি কমলেও তিস্তা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে, আরেক দফা তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি কমলেও বন্যা এলাকার তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজন তাদের গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর। শুকনো খাবার মিললেও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া, বিপুল পরিমাণ আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। চরে এখনও বানের পানি ফসলি জমি তলিয়ে রেখেছে বলে জানান ওই চরের কৃষক গফুর মিয়া (৬৫)।
প্রতি বছরই ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারি বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীতে বন্যার সৃষ্টি হয় এবং দেখা দেয় তীব্র নদী ভাঙন।
পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের উজানে ভারী বর্ষণের ফলে নদীতে পানির প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে যায়। পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমন ধান, সবজির মাঠ ও পুকুর। সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এখন নৌকা ও ভেলা হয়ে উঠেছে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচাজ নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, উজানের ঢল কিছুটা কম থাকায় মঙ্গলবার সকালে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে স্থিতিশীল রয়েছে।
পানি ধীরগতিতে নেমে যাওয়ার কারণে নদী সংলগ্ন আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন হায়দারিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি পূর্বপাড়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানিয়াজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মরিয়ম জানায়, 'স্কুলে গিয়েছিলাম ক্লাস রুমে পানি থাকায় বাড়িতে ফিরে এলাম।'
মহিষখোচা ইউনিয়নের বালাপাড়া, কলতারপাড় গ্রামের স্কুলশিক্ষক দবিয়ার রহমান বলেন, 'বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় আমাদের ক্লাস করাতে ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে।'
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার বলেন, 'রোববার তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে সোমবার থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।'
অপরদিকে বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র সোমবার বিকেলে জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি আগামী দুই দিন সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, পরবর্তী একদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা উক্ত নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং গাইবান্ধার সংলগ্ন উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িক ভাবে প্লাবিত হতে পারে।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, 'বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।'
এমএস/এমএ