ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ তিনটি পদে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক অভিভাবক।
সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় গৌরীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অভিভাবক মো. মোস্তফা কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ, পৌর কৃষক দলের সভাপতি শাহী মুন্সী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে মোস্তফা কামাল বলেন, ২০২৪ সালের জুন থেকে আগস্টের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও নিরাপত্তা কর্মী পদে যেসব নিয়োগ হয়েছে, তা নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে সম্পন্ন হয়েছে। তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলামের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব পদে আর্থিক লেনদেন ও পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা (মোকদ্দমা নং ৭৭/২০২৪) চলমান রয়েছে। প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামের নিয়োগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা এবং গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার মামলায় আসামি ছিলেন। যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করার পরও তিনি পুনরায় স্বপদে বহাল থেকে বেতন-ভাতা ভোগ করছেন, যা সরকারি চাকরি বিধির পরিপন্থী।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম এসএসসি সনদ দেওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে বিনা রসিদে আদায় করেছেন। তার নিয়মিত উপস্থিতি বিদ্যালয়ের পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।
নিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য অনিয়মের মধ্যে ছিল—নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যথাযথভাবে ওয়েবসাইট বা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ না করা, সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে গোপনে পরীক্ষা ও নিয়োগ সম্পন্ন করা, একই দিনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্নপত্রে পরিপত্র অনুসরণ না করা এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া। প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও আনা হয়েছে; তিনি তৎকালীন সভাপতির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হলেও তদন্ত কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কারণ অভিযুক্ত কমিটিরই একজন সদস্যকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা কামাল বলেন, "আমরা বিদ্যালয়ে স্বচ্ছ, মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধু আইনবহির্ভূত নয়, বরং বিদ্যালয়ের সুনামকেও ক্ষুণ্ণ করছে। আমরা এই নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে সুষ্ঠু নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।"
এছাড়া সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্ত ও বেতন-ভাতা স্থগিতের দাবিও উঠেছে অভিভাবক ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।
এএইচএস/এসআর