পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক ও বেঞ্চ সহকারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বেআইনী ভাবে একাধিক মামলার আদেশ ও রায় দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান আলমগীর ও খোকন চন্দ্র মন্ডল নামের দুই ভুক্তভোগী বিচারক আনোয়ার হোসেন ও বেঞ্চ সহকারী আ. কালাম গাজীর বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ বরাবর পৃথক পৃথক অভিযোগ করেছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছেও অনুলিপি পাঠিয়েছেন তারা।
অভিযোগে জানা যায়, কলাপাড়া সিনিয়র সহকারী আদালতের ১০২৭/২০২১ নম্বর একটি দেওয়ানী মামলার ২৬ নং বিবাদী আসাদুজ্জামান আলমগীর। তিনিসহ অন্যান্য বিবাদী পক্ষ বর্ণনা দাখিল করে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ওই মামলায় রব্বান গাজীসহ মোট ১২ জন বাদী রয়েছে। বাদীপক্ষের অনুপস্থিতির কারণে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু খারিজ আদেশের দুই মাস পর কার্যবিধির ১৫১ ধারা মতে খারিজ আদেশ রদ রহিত পূর্বক মামলাটি পূর্ব অবস্থায় পুনঃবহাল করেন। বাদীদ্বয় কলাপাড়া সিনিয়র সহকারী আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন ও বেঞ্চ সহকারী আ. কালাম গাজীর সাথে আতাত করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে কাজটি করিয়েছেন বলে অভিযোগে পাওয়া গেছে।
অপর ভুক্তভোগী খোকন চন্দ্র মন্ডলের অভিযোগে জানা যায়, কলাপাড়া সিনিয়র সহকারী আদালতের ৩২৬/২০২২ নং মামলায় তিনি ৫ নং এবং তার আপন ভাই দুলাল চন্দ্র মন্ডল ৬ নং বিবাদী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা পরিচালনা করে আসছেন। বাদীপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। পরে তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে মোকাবেলা করে ওই নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করেন। ওই আবেদন শুনানীর পূর্বে আদালতের বেঞ্চ সহকারী আ. কালাম গাজী তাদের কাছে ৩ লক্ষ টাকা দাবী করলে তারা ২ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ইস্যু গঠনের দিন মোটা অংকের টাকার লেনদেনের মাধ্যমে বাদীদ্বয়ের পক্ষে পুনরায় একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন মঞ্জুর করেন। ইতোমধ্যে ওই আদালতের বিচারকের বদলীর আদেশ হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন বেঞ্চ সহকারীর মাধ্যমে পেছনের তারিখ দেখিয়ে বদলি হওয়ার পরও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ মঞ্জুর করেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়।
এছাড়া, ওই বিচারকের বদলী এবং নতুন বিচারক নিয়োগ না হওয়ার সুযোগে বদলি থাকাকালীন সময়ে তার বাসায় বসে বেঞ্চ সহকারীর যোগসাজসে কোটি টাকার বাণিজ্যের মাধ্যমে একাধিক রায়, ডিক্রি, নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত মঞ্জুর, নামঞ্জুর, মূল মামলা খারিজ, আরজি সংশোধনসহ বিভিন্ন ধরনের বেআইনি কার্যাবলী সম্পন্ন করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত বেঞ্চ সহকারী আ. কালাম গাজী এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে যান।
অভিযুক্ত বিচারক আনোয়ার হোসেন বলেন, 'হঠাৎ তার বদলি হওয়ায় এবং ট্রানজিটের সাত দিন সময় না পাওয়ায় পেন্ডিং কাজগুলো তাড়াহুড়ো করে করতে হয়েছে। এতে দু-একটি কাজের মান কিছুটা খারাপ হয়েছে।'
তবে, বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য তিনি সাংবাদিককে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে জানতে পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি ক্ষুদ্রে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
টিএইচ/এমএ