চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নির্মমভাবে নিহত হন প্রবাসী জাহিদুল ইসলাম (২৮)। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টায় কাপাসিয়া-হাতিরদিয়া সড়কের গাবতলা এলাকায় এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘চাঁদাবাজদের বিচার চাই’—এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
নিহতের স্ত্রী শিপা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সন্ত্রাসীরা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চাঁদা চাইছিল। আমার স্বামী প্রতিবাদ করেছিল বলেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি তার হত্যার বিচার চাই, যেন কোনো নারীর কোল আর এভাবে খালি না হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদা বেগম জানান, “আমার বাড়িতে ঘর নির্মাণের সময় এলাকার নুরুল হুদার ছেলে মঈনুল চাঁদা দাবি করে। আমি বিষয়টি জাহিদুলকে জানালে সে প্রতিবাদ করে। এরপরই মঈনুল ও তার সহযোগীরা মিলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।”
নিহতের শ্বশুর আলাউদ্দিন বলেন, “জাহিদুল আট বছর আগে আমার মেয়েকে বিয়ে করে। তাদের একটি কন্যাসন্তান আছে। সে সৌদি আরবে চাকরি করত। স্ত্রী ও সন্তানের কাছে থাকার জন্য দেশে ফিরে এসেছিল। এত ভালো একজন মানুষকে এভাবে হত্যা মেনে নেওয়া যায় না।”
জাহিদুলের ভাই অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন জানান, “ঘটনার রাতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আমাদের দুই ভাগনির বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজে চাঁদা চাইলে আমার ভাই প্রতিবাদ করে। এর জেরেই তাকে হত্যা করা হয়।”
নিহতের প্রতিবেশী কামাল হোসেন ও চাচাতো ভাই আইন উদ্দিন বলেন, “জাহিদুল ছিলেন শান্ত স্বভাবের, সবার সঙ্গে মিশে চলতেন। এখন তার ছোট মেয়েটা প্রতিদিন বাবার কবরের পাশে বসে কাঁদে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য আমাদের কাঁদায়। আমরা খুনিদের দ্রুত বিচার চাই।”
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল মধ্যপাড়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত জাহিদুল ইসলাম সনমানিয়া বরকান্দা গ্রামের মৃত হারিস উদ্দিনের ছেলে। তার মা রোকেয়া বেগম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার রাতে বাড়ির পাশের একটি মুদি দোকানে বসে ছিলেন জাহিদুল। এ সময় ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে ডেকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এলাকাবাসী দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এনএএস/এসআর