ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সন্দ্বীপ চন্দ্র দে সজিব (৪০) শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন।
বুধবার (১৮ জুন) নিখোঁজের ৯ দিন পার হলেও জীবিত বা মৃত অবস্থায় সদ্বীপের কোনো সন্ধান মেলেনি। তিনি গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর গ্রামের সুকুমার চন্দ্র দে’র ছেলে।
সন্তান হারিয়ে মা, স্বামী হারিয়ে স্ত্রী এবং প্রিয় বাবাকে হারিয়ে সন্তানসহ পুরো পরিবারে শোকের মাতম চলছে।
নিখোঁজের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জুন (মঙ্গলবার) রাত ৯টার দিকে হাওরে ঘুরতে আসা ২৫ জন যাত্রী ও ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা অষ্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। ঘোড়াউত্রা নদী পার হওয়ার সময় ঝড়ো হাওয়ায় প্রবল ঢেউয়ের মুখে পড়ে নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় অনেক যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও সদ্বীপ নিখোঁজ হয়ে যান।
খবর পেয়ে বাজিতপুর ও ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পরদিন (১১ জুন, বুধবার) সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তবে রাত ৭টা পর্যন্ত নিখোঁজ পর্যটক সন্দ্বীপ চন্দ্র দে কিংবা ডুবে যাওয়া নৌকাটির কোনো সন্ধান না মেলায় অভিযান স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
সদ্বীপের শ্যালক, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ভাষ্করখিলা গ্রামের সুপ্রিয় কুমার দে জানান, ডুবুরি দল চলে গেলেও স্বজনরা স্থানীয়দের সহায়তায় নিজেরাই উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো সদ্বীপের খোঁজ মেলেনি।
মিডিয়াকর্মীরা সদ্বীপের বাড়িতে গেলে তার মা কল্পনা রানী দে সাংবাদিকদের বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, "আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন। আমার ছেলে বলেছে, 'মা, আমি আসতেছি।' কিন্তু আর আসছে না। কোনো কথা বলে না, কোথায় যে লুকিয়ে আছে! তাকে বের করে দিন।"
নিখোঁজ সদ্বীপের দুটি কন্যা—চৈতী রানী দে ও গৌরী রানী দে। বড় মেয়ে চৈতী রামগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, “বাবা বলেছে, ছোট বোনটাকে দেখে রাখিস। এখন চারপাশে শুধু জল। আমার বাবাই জলে হারিয়ে গেছে। প্লিজ, বাবাকে খুঁজে দিন।”
সন্দ্বীপের বড় ভাই আরাধন চন্দ্র দে জানান, তিনি শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই নৌকায় তার দুই শ্যালকও ছিলেন। ঝড়ের কবলে পড়া নৌকাটির অন্য সবাই তীরে উঠতে পারলেও সদ্বীপ ফেরেননি।
স্বামীকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী নন্দিতা রানী দে। জ্ঞান ফিরলেই শুধু স্বামীকে খুঁজে ফেরেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বাজিতপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. আসাদুজ্জামান উদ্ধার অভিযান স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “নদীতে প্রবল স্রোত রয়েছে, এবং এটি কয়েকটি উপজেলার সাথে সংযুক্ত। তাই আমরা পাশ্ববর্তী উপজেলার প্রশাসন, স্থানীয় জেলে এবং এলাকাবাসীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।”
এসআই/আরএন