পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় ফটোশিকারিদের জিম্মি দশা থেকে পর্যটকদের স্বস্তি ফেরাতে অভিযান পরিচালনা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার শেষ বিকেলে পর্যটকদের সুরক্ষা দিতে এবং ছবি তুলে বিরম্বনা এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলামের উপস্থিতিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেক এ অভিযান পরিচালনা করছেন।
অভিযানে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া খুপরি ঘরে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক স্টুডিওগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় স্টুডিওগুলো থেকে ক্যামেরা, প্রিন্টার, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
অভিযান শেষে সন্ধ্যার পর ফটোশিকারি, স্টুডিও মালিক ও কর্মচারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কুয়াকাটা চৌরাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। ঝাঁড়ু হাতে নিয়ে ইউএনও'র অপসারণ দাবি করেন এবং ক্ষতিপূরণসহ জব্দ করা মালামাল ফেরতের দাবি জানান।
শেষে বক্তৃতা দেন কাওসার হাওলাদার, দোজাহান শেখ, সোহেল, ওসমান, ফিরোজ প্রমুখ।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব এবং ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনেক আগেই স্টুডিওগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সৈকতে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে যারা পর্যটকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। এটা নিয়ে প্রায়শই পর্যটকদের সাথে ক্যামেরাম্যানদের ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এখন থেকে প্রত্যেক ক্যামেরাম্যান বিচে স্বাধীন ভাবে ছবি তুলতে পারবে এবং ডেটা ক্যাবল বা মেমোরির মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে সরবরাহ করবে। স্টুডিও নামক মধ্যস্বত্বভোগীদের আর কোনো ভূমিকা থাকবে না। পর্যটকদের সুরক্ষায় এ সকল অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পর্যটকদের অভিযোগ, মনের প্রশান্তি খুঁজতে কুয়াকাটা এসে পা রাখতেই একাধিক ফটোশিকারি একসঙ্গে আমাদের ঘিরে ধরে ছবি তোলার জন্য চাপ দেয় এবং প্রতিযোগিতা চলে কে কাকে বাগিয়ে নিতে পারে। ছবি তোলার পর ছবি দেয়ার নাম করে জোর করে ঝুপড়ি ঘরের স্টুডিওতে নিয়ে ভালো-মন্দ সব ছবি নিতে বাধ্য করা হয়। নেয়া হয় চুক্তি নির্ধারিত টাকার চেয়েও বেশি। ছাতার নিচে বসে একান্ত ভাবে সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করার সময় একের পর এক ক্যামেরাম্যান এসে ছবি তোলার জন্য বিরক্ত করে। গোপনে পর্যটকদের সমুদ্র স্নানের ছবি তুলে তা উপস্থাপন করা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত বিব্রতকর ও অসম্মানজনক।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল, ক্যামেরাম্যানরা সৈকতের উপরে একটি নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন এবং যে পর্যটক চাইবেন তিনি শুধু তারই ছবি তুলবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব নিয়ম না মেনে তারা পর্যটকদের তিক্ত অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করছে।
নেটিজেনরা প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ক্যামেরাম্যানরা ঝাঁড়ু মিছিল করে "মব জাস্টিস" এর মাধ্যমে আইনের শাসনকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমন অবজ্ঞা ও অপমানসূচক কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তার বিচার চেয়ে তাদের মন্তব্যের ঘরে মতামত প্রকাশ করেন।
অভিযানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সহায়তা করেন।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যায়, গত তিন মাসে কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যার অন্যতম কারণ হিসেব উল্লেখ করা হয়- পর্যটকদের হয়রানি, খারাপ আচরণ, জিম্মি দশা ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়।
টিএইচ/এমএ