পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ও মানিকগঞ্জের আরিচা নৌপথে ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা ভাড়া না মানায় সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্পিডবোট সেবা বন্ধ করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বোট মালিকরা।
মঙ্গলবার (৩জুন) সকাল থেকে এই নৌপথের কোনো পার থেকেই বোট চলছে না। এতে ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের জন্য ঈদযাত্রায় যাত্রীদের জিম্মি করতেই এধরণের ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে যাত্রীরাও ৩০০ টাকা দিয়ে পাড়াপারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে সবশেষ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ১৫০ টাকা করে স্পিডবোটের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এরপর আর সরকারিভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। বোট পরিচালনা ব্যয় ও যাত্রী স্বার্থ বিবেচনায় বিআইডব্লিউটিএ ও বোট মালিকরা মৌখিকভাবে নির্ধারণ করে এতোদিন ভাড়া আদায় করেছেন। এরপর চলতি বছরের ৯ এপ্রিল বেড়া উপজেরার আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে স্পিডবোটের যাত্রী ভাড়া ২১০ টাকা নির্ধারণ করে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু এ ভাড়া নীতিমালাও পুরোপুরি মানেননি বোট মালিকরা। এখন আবার ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা ভাড়া আদায়ের অনুমোদন দাবি করেন তারা।
মঙ্গলবার (৩জুন) দেখা যায়, সব স্পিডবোটগুলো ঘাটের সাইডে বাধা রয়েছে। কাজিরহাট থেকে ঢাকা যাওয়া যাত্রিরা লঞ্চ-ফেরীতে পার হচ্ছেন। এসময় কথা হয় ইকরাম, সাইফ, জহুরুলসহ বেশ কয়েজনের সাথে। তারা জানান, স্পিডবোটে ২০ মিনিট পথে আমরা ৩০০ টাকা দিয়ে যাব না লঞ্চ-ফেরীতে করে যাব। এরা যখন যা মনে করে তাই। সরকারি আদেশও মানে না। এরা যাত্রীদের সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করে। দীর্ঘ বছর চলে আসছে। কই তখন তো কোন লোকসান হয়নি? তাহলে এখন কিভাবে লোকসান হয়? আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে স্পিডবোটের যাত্রী ভাড়া ২১০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা উপেক্ষা করে ২৫০ টাকা ভাড়া ও ঘাটে প্রবেশ ফি ৫ টাকা সহ মোট ২৫৫ টাকা করেই আদায় করছিলেন বোট মালিকরা।
গত ২৯মে বেড়া উপজেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা নির্ধারণকৃত ভাড়া ও ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে এই নৌপথের শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এর পরদিনই ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের অনুমোদন দেওয়া না হলে স্পিডবোট বন্ধ রাখা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বোট মালিকপক্ষ।
এ ব্যাপারে বোট মালিক সমিতির সভাপতি ও বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন জানান, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা বোট বন্ধ রাখিনি। মালিকরা লোকসানের জন্য নিজ উদ্যোগে বন্ধ রেখেছেন। আমরা মালিকদের পক্ষ থেকে এর আগে বিআইডব্লিউটিএ-কে বলেছিলাম, ঈদযাত্রায় একপাশ থেকে খালি বোট যায়। ফলে লোকসানের হার বাড়ে। তাই শুধুমাত্র ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের অনুমোদন দেয়া হোক। এ নিয়ে বিআইডব্লিউটি এর চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদনও পাঠিয়েছিলাম। প্রতি ট্রিপে সাড়ে তিন থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। এগুলো তো কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখা উচিত। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীদের কোনো কথাই তারা রাখেননি। এরপর আমরা মালিকদের বলেছি, নির্ধারিত ভাড়াতে সম্ভব হলে চালাতে। সেটি সম্ভব না হওয়ায় তারা নিজ উদ্যোগে আরিচা ও কাজিরহাট উভয় পার থেকেই বোট বন্ধ রেখেছেন।
বিআইডব্লিউটিএ এর নগরবাড়ি-কাজিরহাট ঘাট কার্যালয়ের পোর্ট অফিসার আব্দুল ওয়াকিল বলেন, লাভ লোকসান সমস্ত বিষয় বিবেচনা করেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তবুও তারা লোকসানের অজুহাতে ভাড়া বেশি দাবি করছেন। যেটি বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে কয়েক দফায় আমরা মালিকদের সাথে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নিয়ে মিটিং করেছি। তবুও তারা বোট বন্ধ রেখেছেন। এটি স্পষ্ট সরকারি আইন লঙ্ঘন। আমরা এখান থেকে সরাসরি রুট পারমিট বাতিল করতে পারি না। ফলে এব্যাপারে আমি উর্ধ্বতনদের কাছে প্রস্তাবনা রাখবো নিয়ম মানছেন না এমন বোটগুলোর রুট পারমিট স্থায়ীভাবে বাতিলের।
ঈদযাত্রায় তেমন অসুবিধা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লঞ্চ-ফেরী সবই পর্যাপ্ত রয়েছে। এগুলোতে অনায়াসে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন। এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
জেডইউ/এসআর