ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের ওপর দিয়ে সিডর, ফণী, আইলা, রেশমী, রোয়ানু, হুদহুদ, মোরা, কায়ান্ট, মহাসেনসহ একাধিক ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলেও, আজও উপকূলবাসীর জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হয়নি। ফলে দুর্যোগের সময় চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী দুই লাখেরও বেশি মানুষের জীবন চরম অনিরাপদ হয়ে পড়ে।
সবশেষ ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে উপকূলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আশ্রয়কেন্দ্রের সংকটে অনেক মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতার পানি প্রবাহিত হয় এবং ভোর থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত। রাতে হঠাৎ উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের খেজুরগাছিয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পড়লে জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় অনেকেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারেননি।
দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, উপজেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা কাজ করলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
সাগর মোহনার তিনটি দ্বীপ ইউনিয়নের একটি ঢালচর। সেখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একটি আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে সর্বোচ্চ ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এতে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র খবর ছড়িয়ে পড়তেই দ্বীপজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, নৌযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কুকরী-মুকরী ইউনিয়নে ১৭ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ৮টি স্কুলকাম আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে সর্বোচ্চ ৪-৫ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব। দিনের জোয়ারে দ্বীপের উপরের অংশ প্লাবিত হওয়ায় রাতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
তেতুলিয়া নদীপারের মুজিবনগর ইউনিয়নের ১৮ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ৫টি স্কুলকাম আশ্রয়কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেয়ে অনেকেই দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছেন। পুরো উপকূল অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার গবাদি পশুর জন্য রয়েছে মাত্র ৪টি মাটির কেল্লা।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানিয়েছেন, ঝড় মোকাবেলায় উপজেলার ২৬৫টি স্কুলকাম আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপজেলা সদরের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। নদী ও সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা, যার ফলে বাঁধের বাইরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।
সাগর উপকূলের কুকরী-মুকরী ও ঢালচরে আকস্মিক জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি, উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। ঢালচর ও আশপাশের নদী ও সাগর মোহনা ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে। শত শত নৌকা ও ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরলেও এখনও অনেকে ফিরে আসতে পারেননি।
এসএফ/আরএন