জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়) শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ১২৬তম নজরুল জয়ন্তী। রোববার নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ উক্ত আয়োজনের উদ্বোধন করেন।
“মোরা বন্ধনহীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল” এমন প্রতিপাদ্যে আয়োজিত নজরুল জয়ন্তীতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আলোচনা সভার পূর্বে বেলা ১১টার দিকে নজরুল ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান। পরে তাঁরা ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে আলোচনা সভায় যোগ দেন।
শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন নজরুল সংগীত ‘অঞ্জলী লহ মোর’।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, 'জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর অল্প সময়ের মধ্যে এতো লিখা লিখেছেন যা বলে শেষ করার মতো নয়। ‘মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’—কবির লিখা এমন লক্ষ লক্ষ লাইন রয়েছে। তিনি ছিলেন দ্রোহের কবি, সংগ্রামের কবি, সাম্যের কবি, প্রেমের কবি। তাঁর বিচরণ ছিল বাংলা সাহিত্যের সবখানে। কবি নজরুলের সেই সংগ্রামী আদর্শকে খুব ভালো ভাবে ধারণ করে জুলাই আন্দোলনে আমাদের তরুণ প্রজন্ম নতুন একটি দেশ উপহার দিয়েছে। তারা অনেক রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে।'
তিনি বলেন, 'দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থের জন্য ইউজিসির নিকট দাবি জানায়, আমরা অর্থাৎ ইউজিসি দাবি জানাই সরকারের কাছে আর সরকার বলছে সব অর্থ তো বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে।'
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ত্রিশালের সন্তান হিসেবেই সকলেই মনে করে। সেটার রিফ্লেকশন আমরা দেখতে পাই এই অঞ্চলে নজরুলের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নে। ময়মনসিংহ তথা ত্রিশাল যেন নজরুলময় অঞ্চল।'
তিনি বলেন, 'কোলকাতায় যেমন বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন হয়েছে, আমরা সরকারের ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহযোগিতায় এই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে নজরুল নিকেতন হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি, সেভাবে এগিয়ে যাব।'
তিনি নজরুলের চেতনা ও দর্শন তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দেন এবং অতিথি ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান ও নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. জেহাদ উদ্দিন।
স্বাগত বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইংরেজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রায়হানা আক্তার এবং ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লাল হোসাইন।
আলোচনা সভা শেষে বইমেলার উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এরপর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন।
দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নজরুল বক্তৃতামালা। সে সময় বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ পাঁচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।পরিশেষে সন্ধ্যা ৭টায় ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার, আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) ড. মো. আশরাফুল আলম এবং বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স)।
এমএ