বিডিআর তদন্ত কমিশনের সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব মুন্সী আলাউদ্দীন আল আজাদ বলেছেন, “প্রস্তাবিত কর সংস্কারের মাধ্যমে দেশে ধূমপানের হার ১৫.১ শতাংশ থেকে ১৩.০৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। এতে করে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়তে পারেন এবং ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত থাকতে পারেন।”
বুধবার (২১ মে) সিআইআরডিএপি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত '২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধি এবং করনীতি সংস্কার' শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। উন্নয়ন সংস্থা ডর্প (DORP) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী, সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও নীতিনির্ধারকগণ, যারা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে কর বৃদ্ধির দাবি জানান।
ডর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার এবং মুন্সী আলাউদ্দীন আল আজাদ।
অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২৫’ পুরস্কার পাওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয়। এনবিআরের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন কর নীতি বিভাগের প্রথম সচিব মো. তারেক হাসান।
মূল প্রস্তাবে কম দামের ও মাঝারি দামের সিগারেটের স্তর একত্রিত করে ১০টি স্টিকের প্যাকেটের ন্যূনতম খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। বক্তারা জানান, বর্তমান দামের স্তরগুলোর মাঝে ব্যবধান কম থাকায় ক্রেতারা সহজেই স্তর পরিবর্তন করেন, যা কর বৃদ্ধির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। স্তর একত্রিত করলে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডর্প-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. জোবায়ের হাসান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন, যেখানে ৯০ টাকা (কম-মাঝারি স্তর), ১৪০ টাকা (উচ্চ স্তর) এবং ১৯০ টাকা (প্রিমিয়াম স্তর) নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এর সাথে ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, ১৫% ভ্যাট এবং ১% স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ প্রযোজ্য থাকবে।
অন্যান্য তামাকপণ্যের ক্ষেত্রে ২৫টি নন-ফিল্টার বিড়ির দাম ২৫ টাকা এবং ২০টি ফিল্টার বিড়ির দাম ২০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। জর্দা ও গুলের জন্য যথাক্রমে ৫৫ টাকা ও ৩০ টাকা দাম নির্ধারণ করে ৬০% সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫% ভ্যাট ও ১% সারচার্জ রাখা হয়েছে।
মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বর্তমান চারস্তর বিশিষ্ট সিগারেট মূল্যনীতি কার্যকর নয়। এর ফলে কর বৃদ্ধির প্রভাব হ্রাস পায়। তিনি স্তর একীভূতকরণের প্রস্তাব সমর্থন করে বলেন, “২০২৫-২৬ বাজেট বাস্তবায়িত হলে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী ও তরুণদের মধ্যে ধূমপান নিরুৎসাহিত হবে।”
দীর্ঘমেয়াদে প্রস্তাবিত সংস্কারের ফলে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লাখ ৬৯ হাজার তরুণের মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
এনআরই/এসআর