ভোলায় যাত্রী নিয়ে বাস শ্রমিক ও সিএনজি চালকদের মধ্যে আবারও দ্বন্দ্বের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট চলছে। গত রবিবার (৪ মে) বিকেলে বাস শ্রমিকদের ওপর হামলা, বাস ভাঙচুর করার জের ধরে অনির্দিষ্টকারেল জন্য বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
সোমবার দিনব্যাপী ভোলার অভ্যান্তরীণ পাঁচটি রুটে সকল ধরণের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তীতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। জরুরী প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ব্যাটারীচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। কয়েক দিন পর পর বাস শ্রমিক ও সিএনজি চালকদের দ্বন্দ্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (৪ মে) বিকালে ভোলা চরফ্যাসন সড়কের বাংলা বাজার জয়নগর স্কুল এলাকায় যানজট সৃষ্টি ও যাত্রী উঠানো নিয়ে বাস এবং সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে একই সময়ে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাট, বোরহানউদ্দিন, কুঞ্জেরহাট, লালমোহন ও কর্তারহাটে সিএনজি চালকরা একত্রিত হয়ে বাস আটকে রেখে ২০জন বাস শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা থেকে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা।
এর আগেও গত ২৭ এপ্রিল ভোলার চরফ্যাশনে বাস শ্রমিক ও সিএনজি চালকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। এর পর দিন বিকেলে ভোলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মিলে দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিমাংশা করে দেন। এছাড়াও গত জানুয়ারী মাসেও বাসস্ট্যান্ডে সিএনজি রাখা নিয়ে বাস-সিএনজি শ্রমিকদের দুই দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে দুইটি বাস ও ৯টি সিএনজিতে আগুন দেওয়া হয়। সেই সময়ও জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মিলে বিষয়টির সমাধান করেন।
সাধারণ যাত্রীরা জানান, বাস-সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এতে করে সাধারণ মানুষ ভোগান্তীতে পড়তে হয়। তাদের এ বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করা না হলে ভবিষ্যতে এটি চলতেই থাকবে।
ভোলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান জানান, রবিবার দুপুর ২টার দিকে হাজি পরিবহন নামের একটি বাস ভোলা সদর থেকে দৌলতখানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসটি বাংলাবাজারের কাছাকাছি জয়নগর স্কুলের সামনে গেলে স্কুল ছুটি হওয়ায় বাসের গতি কমিয়ে দেয়। এ সময় বাসের পিছনে থাকা ৫-৬টি সিএনজি বাসটির সামনে গিয়ে গতিরোধ করে বাসের চালক ও সহযোগীকে বেধম মারধর করে গুরুতর আহত করে। একই সময়ে তারা ভোলার ভেদুরিয়া, কুঞ্জেরহাট, বোরহাউদ্দিন, লালমোহন ও কর্তারহাটে বাস আটকিয়ে চালক ও শ্রমিকদের মারধর করে তিনটি বাস ভাঙচুর এবং পাঁচটি বাস আটকে রাখে।
এর আগেও গত ২৭ এপ্রিল চরফ্যাশনে সিএনজি চালকরা বাস চালক ও শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। ওই ঘটনায় পরদিন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার দুই পক্ষকে ডেকে একটি সমাধান করে দিয়েছেন। আমরা সে সময় বিষয়টি মেনে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আবার বাস চালানো শুরু করি। কিন্তু আবারও জিএনজি চালকরা পরিকল্পিতভাবে বাসের চালক ও শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনা আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। এবার আর রুমের মধ্যে বসে কোনো ফয়সালা হবে না। ফয়সালা হবে বাসস্ট্যান্ডের খোলা যায়গায়। অন্যথায় কোনো শ্রমিক বাস চালাবে না ধর্মঘট চলতে থাকবে।
সিএনজি চালিকদের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ অটোরিকশা ও হালকাযান পরিবহন ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মাকুসুদর রহমান জানান, একটি বাস সিএনজিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার জেরে বাস শ্রমিকরা ৪টি সিএনজি ভাঙচুর ও পাঁচটি সিএনজি আটক করে রাখে। সড়কে চলাচলের জন্য তারা সুষ্ঠু পরিবেশ ও সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রবিবার বিকাল থেকেই বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ভোলার পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক জানান, যাত্রী নিয়ে বাস শ্রমিক ও সিএনজি চালকদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এর সূত্র ধরে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস শ্রমিকরা। এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। তবে যাতে কোনো ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য পুলিশ মাঠে কাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে ও উভয়পক্ষের মধ্যে সমযোতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এএম/এসআর