সংযোগ সড়ক ধ্বসে পড়ায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নে সুরিয়া নদীর ওপর সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু জনসাধারণের কোনো কাজে আসছে না। সংযোগ সড়কটির জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি ও সেতুর মুখের অধিকাংশ সড়ক ধ্বসে পড়ায় সেতুর ওপর দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র দুই চাকার যান ও পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করতে পারছে।
সময় বাঁচাতে ধ্বসে পড়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে করে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।
এলাকাবাসী জানান, সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মাথায় ভারী বর্ষণে সেতুর সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ধ্বস দেখা দেয়। সংস্কার না হওয়ায় ইট খসে পড়ে দিন দিন সংযোগ সড়কটি সরু হয়ে যাচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে সংযোগ সড়কের ইট। বছর খানেক ধরে সেতুটি গ্রামবাসীর খড় ও ফসল শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালীপাড়া ও খলতবাড়ি গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সুরিয়া নদী। দুই পাড়ের ১০টি গ্রামের মানুষের চলাচল, কৃষি পণ্যসহ অন্যান্য মালপত্র স্থানান্তরের জন্য এলজিইডি ২০২৩ সালে এই সেতুটি নির্মাণ করে।
গৌরীপুর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের উদ্যোগে সুরিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয় পালুহাটি-মাওহা আঞ্চলিক সড়কে মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর ও খলতবাড়ি গ্রামের সংযোগস্থলে। ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৪ টাকা ৫৪ পয়সা ব্যয়ে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিলো সোহেল এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালে ১০ মার্চ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
সুরিয়া নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় গৌরীপুর উপজেলাসহ নেত্রকোণার সঙ্গে আঞ্চলিক যোগযোগ ব্যবস্থায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের এক বছরের মাথায় সেতুর সংযোগ সড়কে গর্ত ও ধ্বস দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কার না করায় সংযোগ সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো বড় হয়ে ইটসহ ধ্বসে পড়তে থাকে। এর মধ্যে নয়ানগর বাউশালিপাড়া অংশের সংযোগ সড়কের বড় অংশ ধ্বসে পড়ে গেছে। এছাড়াও সেতুর গাইড ওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ও ইট খসে পড়ে গেছে। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। এতে করে সড়কটি সরু হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এক বছর ধরে সেতুটি গ্রামবাসীর খড় ও ফসল শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রামবাসী জানান, বিকল্প পথে উপজেলা শহরসহ নেত্রকোণা যাতায়াত করতে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। তাই সময় বাঁচাতে ধ্বসে পড়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে করে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সাদী বলেন, সুরিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হওয়ায় দুই পাড়ের মানুষ খুশি হয়েছিল। কিন্তু সেতুর সংযোগ সড়ক ধ্বসে পড়ায় মানুষ সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে নির্মাণের এক বছরের মাথায় সংযোগ সড়ক ধ্বসে পড়ছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। বর্ষার আগেই সংযোগ সড়ক সংস্কার করা না হলে ধ্বসে পড়া সড়ক সুরিয়ায় বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা আজহারুল করিম বলেন, মাওহা ইউনিয়নের বাউশালীপাড়া ও খলতবাড়ি সংযোগস্থলে নির্মিত সেতুর আশপাশে নির্জন। তাই রাতের বেলায় সংযোগ সড়কের গর্ত ও ধ্বসে পড়া ইট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। এতে করে গর্ত আরও বড় হচ্ছে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বর্ষার আগেই সড়ক সংস্কার না করলে দুই পাড়ের মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) অসিত বরণ দেব বলেন, ইতিমধ্যে এলজিইডি ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দল সেতুর ধ্বসে যাওয়া সংযোগ সড়ক পরিদর্শন করেছে। সড়ক মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করতে সড়ক সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সড়কের ইট চুরি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআই/এমএ