পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার ৬০ নং লতাচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি পুরানো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। যা যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি লাগোয়া খেলার মাঠে প্রতিদিনই খেলাধুলা করে এবং কুয়াকাটা সদর রোডের পাশে এই ভবনটি অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ এই ভবনের পাশ দিয়ে চলাচল করেন। ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় পর্যটকসহ সকল মানুষের জন্য এটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির দেয়ালগুলোতে গভীর ফাটল, ছাদের টালি ভাঙা এবং অন্যান্য ত্রুটি স্পষ্ট। বেশ কিছুদিন আগে ভারী বর্ষণের কারণে ভবনটির ছাদের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। তবে গভীর রাতে ভেঙে পড়ার কারণে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়রা ধারণা করছেন, ভবনটির কোনো অংশ যদি ধসে পড়ে, তাহলে এটি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুসহ কুয়াকাটায় স্থানীয় এবং আগত পর্যটকদের জন্য মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
ভবনটির সামনে “ঝুঁকিপূর্ণ ভবন” লেখা একটি সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। তবে মাসের পর মাস ভবনটি এভাবে পড়ে থাকলেও দ্রুত অপসারণের জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ- এমনটি দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় দোকানদার সালাউদ্দিন গাজী বলেন, 'বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ভবনটির আশপাশে খেলাধুলা করে এবং ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ সেটা অনেকেই জানেন না বা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন লেখা সাইনবোর্ড খেয়াল করে না। যে কারণে ভবনটির আশপাশে অনেক সময় অনেককেই দেখা যায় যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। আমাদের দাবি- খুব দ্রুতই ভবনটি অপসারণ করে স্থানীয় মানুষকে ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করা হবে।'
বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি এবং স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ্ব এম এ মান্নান বলেন, 'সম্ভবত ১৯৭৪ অথবা ১৯৭৫ সালে এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) সাইক্লোন সেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে এই ভবনটি নির্মাণ করেন। ১৯৯৮ সালে কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা হলে এলজিইডি ভবনটিতে রেস্ট হাউস নির্মাণ করে। তখন পাশে নির্মিত নতুন ভবনে চলে যায় প্রাথমিকের কার্যক্রম। এরপরে বেশ কয়েকবার সংস্কার হলেও বর্তমানে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু পাশেই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মহাসড়ক তাই খুব দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ হবে ভবনটি অপসারণ করা।'
স্কুল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। লতাচাপলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের প্রায় চার শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিনই ভবনটি লাগোয়া মাঠে খেলাধুলা করে। অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রীদের বার বার বারণ করেও বোঝানো সম্ভব হয় না। যে কারণে আমাদের খুব দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই- খুব দ্রুত যাতে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।'
এ বিষয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী সাদিকুর রহমান বলেন, 'ভবনটিকে আমরা অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় ভবনটির বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে এবং লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি সম্পর্কে অবগত করেছি এবং তথ্য দিয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত ভবনটিকে অপসারণ করে নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।'
এমপি/এমএ