কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ প্রশাসন নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থানীয় নেতারা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি নেতারা জেলার পুলিশ সুপার ও বাঙ্গরা থানার ওসির নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা কুমিল্লার এসপি এবং মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসির গায়েবি মামলা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। অন্যথায় মুরাদনগরের আপামর জনতা আরেকবার যুদ্ধে নামতে বাধ্য হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভুঁইয়ার নির্দেশে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে, থানায় নিয়ে নির্যাতন করছে।
মজিবুল হক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের লোকজন এনসিপিতে যোগ দিয়েছে। আর উপদেষ্টা আসিফের সঙ্গে মিশে পুলিশের সহযোগিতায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আগের মতো জুলুম নির্যাতন শুরু করেছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে সারাদেশের মতো মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও জীবনবাজি রেখে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
“আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শত জুলুম নির্যাতন সহ্য করেও রাজপথ ছাড়িনি। তবে; রাজপথের আন্দোলন এবং সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও আমরা মুরাদনগরবাসী আজও ফ্যাসিবাদের রোষানলে পড়ে রয়েছি,” তিনি বলেন।
মজিবুল হক দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের নির্দেশে মুরাদনগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন এনসিপিরুপে আমাদের নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও বিএনপির বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটি করা হয়। মূলত সেই কমিটিতে মুরাদনগরের কোম্পানিগঞ্জে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার আপন চাচাতো ভাইকে আহবায়ক করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে ওই কমিটি প্রত্যাখান করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।
মোল্লা মজিবুল হক বলেন, শুধু তাই নয়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুমিল্লার এসপি পরিবর্তন করে তার মদদপুষ্ট এসপি নিয়োগ দেয়। নতুন এসপি এসেই মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসি পরিবর্তন করে। মুরাদনগরের বর্তমান ওসি ঢাকায় ডিবিতে কর্মরত ছিলেন এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছেন। যিনি সব সময় সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের প্রশংসা করেন।
উপদেষ্টার লোকজন সংখ্যায় খুবই নগণ্য হলেও এখন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাদের প্রধান ভরসা উল্লেখ করে মজিবুল হক বলেন, তারা মুরাদনগরে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘরে ঘুমাতে দেবে না। তিন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মুরাদনগরে যা ইচ্ছে করবে। প্রশাসন তার কথামত কাজ করবে এবং বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে মুরাদনগরের সাধারণ জনগণ ও বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের আবেদন, আমাদের পুলিশের ফ্যাসিবাদী আচরণ থেকে রক্ষা করুন। কুমিল্লার এসপি মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসির গায়েবি মামলা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। অন্যথায় মুরাদনগরের আপামর জনতা আরেকবার যুদ্ধে নামতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সৌমিতা বেগম নামে এক মধ্যবয়সী নারী দাবি করেন, বিএনপি করার কারণে তার ছেলে জুয়েলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এখনও সে কারাগারে আছে।
ডব্লিউকে/ এসআর