মসলা জাতীয় অর্থকরি ফসল হলো জিরা। দেশে জিরার চাহিদার পুরোটায় আমদানি নির্ভর। অথচ পরীক্ষামূলক মূল্যবান এই জিরা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম। প্রথমবার চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে বেশ খুশি এই কৃষক। জিরা চাষের পর থেকে এলাকার সবাই তাকে বিজ্ঞানি নামে ডাকে। পাশাপাশি জিরা চাষ দেখতে ভিড় করছেন আশেপাশের কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জিরা একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কম পরিশ্রম ও খরচে জিরা চাষ বেশ লাভজনক। জমির সহজলভ্যতা, অনুকূল আবহাওয়া, রোগবালাই একেবারেই নেই, চাষ উপযোগী মাটি ও সেচ তেমন লাগে না। জিরা চাষে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে। এ অঞ্চলের মাটিতে জিরাসহ অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা কৃষি বিভাগ জমিতে ফসল উৎপাদন ও বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শসহ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। এরই মধ্যে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন কৃষকদের জিরা চাষের উদ্বুদ্ধ করেন এবং বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের দিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার নওহাটা পৌরসভা ব্লকের পাকুড়িয়া ও বালিয়াডাঙ্গা এবং হরিপুর ইউনিয়নের আলিমগঞ্জ ব্লকের খোলাবোনা এলাকার কৃষকরা পরীক্ষামূলক জিরা চাষ করেছেন। এলাকার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় জিরা চাষে সফলতার মুখ দেখছেন তারা।
নওহাটা পৌরসভা ব্লকের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন থেকে তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। অনেকদিন থেকেই বিভিন্ন ধরণের উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষ এবং নতুন নতুন আবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছেন তিনি। এরই মধ্যে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিনের পরামর্শে বগুড়া মসলা গবেষণাকেন্দ্রে জিরা চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন। কৃষি অফিস জিরার বীজ সংগ্রহ এবং পরামর্শসহ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, নতুন ফসল উৎপাদন করে তিনি আনন্দ পান। সেই হিসাবে নতুন ফসল জিরা ক্ষেতে দৃশ্যমান। গাছে ফুল থেকে গুটি তৈরি হয়ে এখন তা পরিপক্ক জিরায় পরিণত হয়েছে। জমিতে উৎপাদিত জিরার গন্ধ ও স্বাদ বাজারের জিরার চেয়েও উন্নত। কিছুদিনের মধ্যেই এসব জিরা ঘরে তুলতে পারবেন। সবাই যদি এক-দুই কাঠা জমিতে জিরা চাষ করে, তাহলে পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত আয় করতে পারবে কৃষকরা। ফলে মশলা জাতীয় এ ফসল আর আমদানি করতে হবে না।
হরিপুর ইউনিয়নের কৃষক জিয়ারুল জানান, রফিকুল ইসলামের জিরাক্ষেত দেখতে গিয়েছিলাম। জিরা গাছে ফুল ও ফল এখন দৃশ্যমান। পরিপক্ক জিরার গন্ধও অতুলনীয়। এখানকার মাটিতে জিরা চাষ হবে ভাবতেই পারিনি। আগামীতে তিনিও কিছু জমিতে জিরা চাষ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন দেওয়ান বলেন, জিরাচাষ সম্ভাবনাময় এবং লাভজনক মসলা জাতীয় ফসল। বেলে-দোঁয়াশ মাটি জিরা চাষের জন্য ভালো। আগ্রহ বাড়াতে থাকায় কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এলাকার মাটিতে জিরা চাষ দেখে অনেক কৃষক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসও চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসনিম বলেন, উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া জিরা চাষে উপযোগি। মসলা হিসেবে জিরা এ অঞ্চলের জন্য একটা সম্ভাবনাময় ফসল। পরীক্ষামূলক জিরা চাষ করে বুঝতে পারলাম খুব সহজেই এ অঞ্চলের মাটিতে জিরা চাষ করা সম্ভব। মসলাজাতীয় এই ফসলটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ, পরিচর্যার বিষয়ে প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা অব্যাহত আছে। আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জিরার আমদানি কমবে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
আরএইচএফ/এসআর
