রবিবার সকাল ১১ টায় নীলফামারীর জলঢাকা থেকে তিনটি ভ্যানে ২৪ বস্তা আলু নিয়ে মদিনা কোল্ড স্টোরেজে এসেছিলেন আমিনুল হক। হিমাগারে পৌঁছার আগে আলুবাহী যানবাহনের লম্বা লাইনে আটকে গেছেন। সোমবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত আলু হিমাগারে রাখতে পারেননি তিনি। সারাদিন সারারাত মহাসড়কের উপরেই কেটেছে তার। পার্শ্ববর্তী হোটেল গিয়ে ভ্যানচালকসহ দুপুরের ও রাতের খাবার খেয়েছেন তিনি।
আমিনুলের মতো আরো শতাধিক আলুচাষী এখনো মহাসড়কের উপরে আলু নিয়ে অপেক্ষায় আছেন, কখন হিমাগারে রাখতে পারবেন! কেউ ভ্যানে, কেউ ট্রাক্টরে, কেউবা ট্রাকে করে আলু নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। আলুবাহী এসব গাড়ির লাইন ৩ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ। অনেকে ক্লান্তি আর অবসাদে আলুবাহী যানবাহনের উপর ঘুমিয়ে পড়েছেন।
সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত এ দৃশ্য দেখা গেছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌর সদরের ব্রীজপাড় থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত বোদা-দেবীগঞ্জ মহাসড়কে (এশিয়ান হাইওয়ে)।
জানা গেছে, দেবীগঞ্জ উপজেলায় হিমাগারের সংখ্যা ৫টি। এসব হিমাগারে আলু ধারণের ক্ষমতা ৯ লক্ষ বস্তা। হিমাগারের মালিকরা জানিয়েছেন, উপজেলার ৫টি হিমাগারে আবাদকৃত সম্পূর্ণ আলু রাখতে সক্ষম হলেও বাইরের জেলা উপজেলা থেকে আলু আসায় স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
উপজেলার রাজারহাট থেকে আলু নিয়ে এসেছেন সামসুল। তিনি জানান, পাশের ফ্রেন্ড কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখতে এসেছিলেন তিনি। সে হিমাগারে আর জায়গা না থাকায় মদিনা কোল্ড স্টোরেজে এসেছেন। তিনিও গতকাল থেকে অপেক্ষায় আছেন মদিনা কোল্ড স্টোরেজের সামনে।
গতকাল থেকে অপেক্ষা করেও কেন হিমাগারে আলু নেয়া হয়নি জানতে চাইলে, মদিনা কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “সবাই একসঙ্গে আলু নিয়ে এসেছেন। আমাদের দেড়শত শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। আজকে আরো ৫০ জন শ্রমিক বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া অন্য কোল্ড স্টোরেজগুলো বন্ধ। এজন্য চাপ বেশি।”
মুয়াজ মাহিব কোল্ড স্টোরেজের সত্ত্বাধিকারী আবুল বাশার খান বলেন, “আমাদের উপজেলায় যে পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে, তা আমাদের উপজেলার ৫টি হিমাগারের ধারণক্ষমতার মধ্যেই। তবে পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলায় হিমাগারের সংখ্যা কম থাকায় তারা আমাদের এখানে আলু এনেছেন। আলু নিয়ে আসলে আমরা তো আর ফেরত দিতে পারি না।”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দেবীগঞ্জ উপজেলায় এবছর আলুচাষ হয়েছে ৬ হাজার ৯ শত ৬২ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ১২ শত ৫২ হেক্টর বেশি। মোট আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক বস্তা (প্রতি বস্তা ৬০ কেজি)।
এইচআর/আরএন