প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানের আগে বাজারে স্বস্তি নেই। অধিকাংশ ইফতারি পণ্যের চড়া দাম ক্রেতাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, শসা, বেগুন ও লেবুর দাম রাখা হচ্ছে বেশি। আবার পেঁয়াজু, আলুর চপ বানাতে প্রয়োজন সয়াবিন তেল। পণ্যটি ঘিরে নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানেও তেলের চড়া দাম।
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও বিভিন্ন শীতকালীন সবজির দাম। এবার অনেকটাই স্থিতিশীল ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও চিনির দর।
এদিকে, বেশির ভাগ দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল দৃশ্যমান নেই। বোতলজাত তেল চাইলে তারা ক্রেতাদের না করে দিচ্ছেন। তবে খোলা তেল ও পাম অয়েলের পর্যাপ্ত মজুদ দোকানগুলোতে দেখা গেছে। আবার অনেক দোকানে প্রচলিত সয়াবিন তেলের কোম্পানির অনুপস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে বোতলজাত করা বিভিন্ন নামের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা গেছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ দোকানি।
আব্দুল হামিদ নামে আরেক দোকানি বলেন, কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না। আবার তেল চাইলে তেল, ময়দা, আটা, সুজির বস্তা নিতে বলছেন। এই সুযোগে কেউ কেউ খোলা তেল বোতলে ভরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামে বিক্রি করছেন।
ক্রেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, বেগুন, শসা ও লেবুর দাম খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছেন। তারা রাতারাতি ১০-২০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ দেখার কেউ নেই।
রাজধানীর মুসলিম বাজার ও মিরপুর-১২ নম্বর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, ৩-৪ দিন ধরেই বাড়তি শসার দাম। হাইব্রিড, দেশি শসা ও ছোট আকারের খিরা পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। যা কয়েকদিন আগেও ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
হাশমত নামের এক দোকানি বলেন, চাহিদা বাড়লে দাম একটু বাড়বেই। গত বছরের রোজায় মানুষ শসা ১০০ টাকায় কিনেছে। বাজারে এখন ভরপুর শসা রয়েছে।
শসার মতো দাম বেড়েছে বেগুনেরও। বেগুনি তৈরি করতে চিকন বেগুনের প্রয়োজন হয়। ৪-৫ দিন আগেও প্রতি কেজি চিকন বেগুন কেনা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুনের মতো দাম বেড়ে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আর গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে লেবুর। শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। ইফতারে সবাই শরবত খাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে লেবুর দামও বেড়েছে। প্রতি ডজন বাতাবি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এছাড়া ১ ডজন দেশি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি হালি বাতাবি লেবু ৫০-৫৫ টাকায় আর কাগজি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়।
যদিও বিক্রেতাদের দাবি- বেশ কয়েকদিন ধরেই লেবুর দাম চড়া।
মিরপুর ১২ নম্বর কাঁচাবাজারে ব্যবসায়ী শাহিন আলম বলেন, আবার বর্ষায় আসবে লেবু সিজন। অনেক দিন ধরেই লেবুর দাম বাড়তি। বাজারে লেবুও কম। এ জন্য দাম একটু বেশি।
গত নভেম্বর থেকেই বোতলজাত সয়াবিনের সংকট চলছে। বেশির ভাগ দোকানেই নেই সয়াবিন তেল। দোকানিরা লুকিয়ে রেখেছেন তেল। পরিচিত ক্রেতার কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
মিনহাজ নামের এক ক্রেতা বলেন, পরিচিত একজন বিক্রেতার কাছ থেকে ১ লিটারের একটি সয়াবিন তেল কিনেছি। গায়ে মূল্য ১৭৫ টাকা লেখা থাকলেও কিনেছি ১৯০ টাকায়। মুসলিম বাজারে বেশ কয়েকটি মুদি দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল চোখে পড়েনি।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সরবরাহ কম থাকায় তারা সয়াবিন তেল ক্রেতাদের দিতে পারছেন না। ডিলাররা আশ্বস্ত করেছেন কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ঠিক হবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকায়, ছোলা প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, বেসন প্রতি কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, চিনি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, আলু প্রতি কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এমএ