“দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি : প্রাণিসম্পদে হবে উন্নতি”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মতো আগামী বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ–২০২৫। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একযোগে সারাদেশে এ প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদ্যাপিত হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
ফরিদা আখতার জানান, জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ পদক প্রদানসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, র্যালি, আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালা ও প্রদর্শনী আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রাণিসম্পদ পদক নীতিমালা অনুযায়ী প্রাণিসম্পদ খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে মোট ১৫টি পদক প্রদান করা হবে। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হবে। জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব পদক প্রদান করবেন প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিওবার্তার মাধ্যমে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের জন্য শুভেচ্ছা জানাবেন।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, কৃষিজ জিডিপিতে অবদান ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং অর্থমূল্যে প্রাণিসম্পদ জিডিপির আকার বর্তমানে ৯১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থানের উৎস—যেখানে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে। দেশে নিবন্ধিত বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার ৮৫ হাজার ২২৭টি এবং প্রান্তিক খামার প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৬৮ লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে—যা নিঃসন্দেহে বড় অর্জন।
রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) প্রতিরোধে ১৭ লাখ ডোজ টিকা, ক্ষুরা রোগ (এফএমডি) নির্মূলে নির্দিষ্ট অঞ্চলে জোনিং কার্যক্রম এবং ছাগলের পিপিআর রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।
তিনি জানান, জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উদ্যাপনের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, নারী ও যুব উদ্যোক্তা সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক মান অর্জন এবং সরকারি–বেসরকারি সমন্বয় আরও জোরদার হবে। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন ও জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/আরএন