তিন দফা গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ঐক্যর নির্দেশনা দেওয়া হলেও পটুয়াখালীর বাউফলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা তা মানছেন না। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসার পর উল্টো রুপে মাঠে নেমে নিজেদের ব্যক্তিগত আধিপত্য প্রদর্শন করছেন তারা। দলীয় কর্মসূচী পালনের নামে পৃথকভাবে শোডাউন করছেন কেউ কেউ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঐক্যের প্রশ্নে অনড় অবস্থানে থাকায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এরমধ্যে পটুয়াখালী-২ বাউফল আসনটি বাদ পড়াদের তালিকায় স্থান পায়। ধারণা করা হচ্ছে, জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে শরিকদের আসনটি ছেড়ে দেবে বিএনপি। এদিকে দীর্ঘদিন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, জিয়াউর রহমানের লাশ শনাক্তকারী প্রকৌশলী শোয়েব বাশরী হাবলু, সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার, শিল্পপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবীদ মিজানুর রহমান লিটু ও আনিচুর রহমান আনিস। এই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সাম্প্রতিককালে বিএনপির গুলশান কার্যালয় থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ৩ দফা ডেকে নিয়ে ধানের শীষের পক্ষে একসঙ্গে একমঞ্চে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রত্যেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শর্ত দিয়ে এলেও মাঠে এসে তারা পুনরায় বিভক্ত হয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নিজেদের জাহির করতে ৩১ দফা প্রচারপত্র বিলির আড়ালে পৃথক পৃথক শোডাউন করছেন। গত ২৮ অক্টোবর যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৭ নভেম্বর দলীয় কর্মসূচীও পৃথক পৃথক ব্যানারে করা হয়েছে। শিগগিরই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু উপজেলা বিএনপির এই বিভেদের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজ বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শর্ত দিয়ে আসার পরও মাঠে নেমে রূপ পাল্টে শোডাউন করছেন কেউ কেউ। দলীয় প্রতিটি কর্মসূচীতে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সেখানে আসেন না তারা। বরং উপজেলা বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করছেন। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে তারা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপির মূলধারার সঙ্গেই আছে বলে দাবী করেন তিনি।
অচিরেই দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা হলে সবাই একমঞ্চে এসে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সহকারি অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বা সদস্য সচিব কোনো কর্মসূচীর আয়োজন করলে আমরা অংশ নেই না ঠিকই। কারণ এই কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। মনোনয়ন কেন্দ্রীক রাজনীতির প্রশ্নে তিনি বলেন, যিনি এমপি হওয়ার পর কঠোরভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, সেই রকম যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হলে অচিরেই সকল বিভেদ নিরসন হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালিশুরী, ধুলিয়া ও কেশবপুর ইউনিয়নের একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, মনোনয়ন কেন্দ্রীক রাজনীতি করায় আমরা বিপাকে আছি। কার প্রোগ্রামে গেলে কে মাইন্ড করবে এই নিয়ে সারাক্ষণ টেনশনে থাকি। এ কারণে অনেক সময় প্রোগ্রামে না গিয়ে ঘরে বসে থাকি। সংকট থেকে উত্তোরণ প্রশ্নে তারা বলেন, ২০০১ সালের পর থেকে অদ্য পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রত্যেকের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করে উচ্চ শিক্ষিত, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ তথা ক্লিন ইমেজের একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে সকল বিভেদ দূর হয়ে যাবে। মনোনয়ন নিশ্চিত করার পর যারা বিদ্রোহী বা মীর জাফরের ভূমিকায় থাকবে তাদের ব্যাপারেও দলকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় এই আসনে বিএনপির ভরাডুবি হবে।
তারা বলেন, এর আগে দেখেছি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পেরে কেউ কেউ দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাকে সাংগঠনিক শাস্তির আওতার আনতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সামুয়েল আহমেদ লেনিন বলেন, বাউফলে মনোনয়ন কেন্দ্রীক রাজনীতি চলছে এটা শতভাগ সত্য। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদেরকে জাহিরের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পৃথক মঞ্চে অবস্থানের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই মুহুর্তে বাউফল উপজেলা বিএনপিতে ঐক্যের বিকল্প নেই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই কাছাকাছি। সময় খুবই কম। যিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন তাকে নিয়ে বাকী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঠে কাজ করে ফসল ঘরে তুলে আনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
এসআর