বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা সরকারকে বলছি, এই মাসের মধ্যে গণভোট দিন। গণভোট নিয়ে তালবাহানা করবেন না। যারা জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শেষ করতে চেয়েছিল, তারা সফল হয়নি। জামায়াত এখনও আছে এবং ইনশাআল্লাহ থাকবে। বরং আগের তুলনায় এখন আরও বেশি জনপ্রিয়। যারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল, নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে এবং লাখ লাখ নেতাকর্মীকে জেলে ভরেছিল, তারা আজ কোথায়? তারা বুঝতে পারছে না যে জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে কোনো আদর্শকে শেষ করা যায় না।”
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা জামায়াত আয়োজিত এক বিরাট পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা আমীর মুফতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চল টিমের সদস্য, ফেনী-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া; ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও ফেনী-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক; ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এড. এএসএম কামাল উদ্দিন।
ফেনী জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা নায়েবে আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক আবু ইউসুফ, সদর উপজেলা আমীর মাওলানা নাদেরুজ্জামান, শ্রমিক নেতা ফারুক আহমেদ আযাদ, ছাত্র শিবিরের শহর সভাপতি ওমর ফারুক এবং শহর জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম।
বর্ষীয়ান জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, “সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, এটি দেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং হারানো ভোটের অধিকার পুনরায় পাবেন। ফলে দিনের ভোট রাতের অন্ধকারে হবে না, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সুযোগ থাকবে না। এজন্য জুলাই সনদকে আইনে পরিণত করতে হবে। এর সফল বাস্তবায়নের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন, “আগামীতে জনগণ যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীকে দেয়, তবে আমরা শোষণহীন ও বৈষম্যহীন একটি মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখব। আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর নির্দেশিত পথে সততার সঙ্গে জনগণের আমানত সংরক্ষণ ও ব্যবহার করব।” তিনি নির্বাচনে দেশের শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী শক্তির পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “অনেক দল ও নেতা দেখেছেন, এবার জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচিত করে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে পরীক্ষা করুন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সরকারি বরাদ্দ শুধুমাত্র জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে।”
এটিএম আজহারুল আরও বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা সমতুল্য। ফ্যাসিবাদী কাঠামো বজায় রেখে এমন একটি নির্বাচন দেশের সমস্যা সমাধানের পথ নয়।”
তিনি উল্লেখ করেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হওয়া উচিত, তবে তার আগে সরকারকে অবশ্যই সকল দলের জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে না। তাই আনুপাতিক নির্বাচনের (পিআর) ব্যবস্থা প্রয়োজন। জুলাই সনদে পিআর অন্তর্ভুক্ত করে সংসদের উভয় কক্ষে তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি এবং সংবিধানে একক ব্যক্তির সর্বময় ক্ষমতার কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী হয়েছে। তারা ভোট ও বাক স্বাধীনতাকে হাস্যকরভাবে পরিণত করেছে। সেই ব্যবস্থা আর বহাল রাখা যাবে না। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জন আকাঙ্খাকে ধারণ করে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। গণহত্যায় জড়িত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যারা বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে এবং মানুষের ভোট ও বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গণহত্যার দায়ে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”
জামায়াত নেতা বলেন, “জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সকল বৈষম্য দূর হবে, ধর্ম, বর্ণ, দলমত এবং নারীর সর্বোচ্চ অধিকার সমুন্নত করা হবে। সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত, দক্ষ ও অদক্ষ কর্মজীবীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হবে, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের মূলতপাটন করা হবে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নির্মূল করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে আল্লাহর আইন ও সৎ শাসন কায়েমের লড়াই চালাচ্ছি। যতদিন আল্লাহর আইন ও সৎ শাসন প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন আমাদের লড়াই চলবে ইনশাআল্লাহ। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের অসংখ্য ভাইকে ক্রসফায়ার করেছে এবং কারাগারে পাঠিয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করলে বাংলাদেশ বিশ্বের মঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এজন্য সৎ ও খোদাভীরু ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে হবে।”
এটি/আরএন