সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যমুনা রেল সেতুর পিলারে ফাটলের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে দিনভর আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে একটি মহল। তবে সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে এমন ছবি তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে। তারা সবাইকে এ ধরনের গুজবে কান না দিতে এবং বিভ্রান্ত না হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই একাধিক ফেসবুক পেজে যমুনা রেল সেতুর পিলারে ফাটলের অভিযোগে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করা হয়। এসব ছবিতে সেতুর পিলারে চুলের মতো সূক্ষ্ম ফাটল দেখা যায়। ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অনেকে সামাজিক মাধ্যমে কটূ মন্তব্য করেন।
সিরাজগঞ্জ, পাবনা সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছবিগুলো দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। কোনো কোনো পোস্টে সেতুর পিলার ভেঙে যাওয়ার দৃশ্যও দেখানো হয়, যা দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হন।
তবে যমুনা রেল সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি ফাটল নয়, বরং প্রচণ্ড গরমের কারণে সৃষ্ট ‘হেয়ার কাট’ বা চুলাকৃতি ফাঁকা। এতে কোনো ভয়ের কারণ নেই, এবং রেল চলাচলেও কোনো সমস্যা হবে না।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী নাইমুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “সেতুর পশ্চিম প্রান্তে ৮–১০টি পিলারের নিচের অংশে কিছু স্থানে চুলাকৃতি ফাঁকা দেখা গেছে। এগুলো ঘষে আঠার প্রলেপ দিয়ে মেরামতের কাজ চলছে। এটি কোনো নির্মাণ ত্রুটি নয়, এবং ‘হানিকম্ব’ও নয়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রচণ্ড গরম ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে পিলারে শূন্য দশমিক এক থেকে তিন মিলিমিটার পর্যন্ত ক্ষুদ্র আকৃতির ফাঁক সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেতুর মূল কাঠামো বা কংক্রিট স্থাপনার কোনো ক্ষতি হবে না, এবং ট্রেন চলাচলেও কোনো প্রভাব পড়বে না।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে এই ক্ষুদ্র ফাঁকগুলো বড় করে দেখিয়ে ছবি সম্পাদনা করে পোস্ট করেছে, যাতে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়ায়।”
প্রকৌশলী নাইমুল হক সবাইকে এসব গুজবে কান না দিতে এবং বিভ্রান্ত না হতে আহ্বান জানান।
৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ রেল সেতুটি দেশের দীর্ঘতম ও প্রথম ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েল গেজ রেলসেতু। চলতি বছরের ১৮ মার্চ রেল সেতুর পূর্ব প্রান্তের ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়।
সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭২.৪ শতাংশ অর্থায়ন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং বাকি অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। জাপানের ওবায়াশি (OTG) ও আইএইচআই (IHI) যৌথভাবে রেল সেতুটি নির্মাণ করেছে।
এবি/আরএন