রাজধানীর বাজারগুলোতে সরবরাহ বাড়ায় শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম কমেছে। বিগত কয়েক মাস ধরে বেশির ভাগ সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার ঘরে থাকলেও বর্তমানে কমে ৫০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে এসেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, নতুন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। শীত শুরু হলে নতুন সবজি উঠলে এ দাম আরও কমে আসবে।
বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, ঢেঁড়শ প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ঝিঙে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধন্দুল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, শিম প্রতি কেজি ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস (ছোট) ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস (ছোট) ৫০ টাকা, মূলা প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কচু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১২০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাক ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৫০ টাকা, কলমি শাক ২ আঁটি ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আগারগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, 'সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। সরবরাহ বাড়ছে দাম আরও কমে আসবে।'
এদিকে, সবজির দাম কমতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে ভোক্তাদের। ক্রেতারা বলছেন, অনেক সবজিই এখন ৫০ টাকা কেজিতে কেনা যাচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও ৬০ থেকে ৮০ টাকার নিচে কেনা সম্ভব হয়নি।
তালতলা বাজারে আসা ব্যাংকে কর্মরত আবুল কাশেম বলেন, 'গত সপ্তাহে শিম ১৬০ টাকা দরে কিনেছিলাম আজ ৮০ টাকা দরে কিনলাম। অনেক সবজি ৫০ টাকা কেজি দরের নিচে পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে এসে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলছে।'
শান্তিনগর বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম বলেন, 'গত চার মাস ধরে সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি যাচ্ছিল, সে সময় বলতে গেলে ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই তুলনায় এখন বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। বাজার করার সময় দেখলাম বেশির ভাগ সবজি ৫০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে, তবে কিছু কিছু সবজি এখনো ১০০ টাকা রয়ে গেছে।'
মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক বলেন, 'আগের তুলনায় সবজির দাম কমেছে। বাজারে নতুন সবজি উঠতে শুরু করেছে এবং প্রচুর সরবরাহ আছে। ফলে বাজারে আগের তুলনায় দাম কমে এসেছে। সামনে শীত আসছে, নতুন আরও সবজি বাজারে উঠবে। ফলে সামনে সবজির দাম আরও কমে যাবে। বর্তমান বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকার সবজি বেশি রয়েছে। এছাড়া, কিছু কিছু সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'
বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮৫ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।
এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকার ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, দেশি শিং ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায় এবং পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে ২৮০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড মুরগি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৭৫ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৫৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২১০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ১১০ টাকা এবং সোনালি কক মুরগির ডিমের হালি ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আজমপুর বাজারের বিক্রেতা রফিক বলেন, 'গত সপ্তাহে ব্রয়লারের পাইকারি দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৮০ টাকার ওপরে। এখন সেটা ১৫৫-১৬০ টাকায় নেমে এসেছে। তাই খুচরায় আমরা ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে খাবার আর পরিবহন খরচ না কমলে দাম আর নামবে না।'
খিলক্ষেত বাজারের এআর রহমান বলেন, 'দেশি আর সোনালি মুরগির দাম অনেক দিন ধরেই একই জায়গায় আছে। ক্রেতারা এখন ব্রয়লারের দিকেই ঝুঁকছে কারণ সেটা তুলনামূলক সস্তা।'
বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা আজম খান বলেন, 'ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগির দাম তো এখন হাতের নাগালে নেই। একটা ছোট সোনালি মুরগিই নিতে ৩৫০ টাকা লেগে যায়। সাধারণ মানুষ এখন শুধু ব্রয়লারেই ভরসা রাখছে। আবার মাসের শেষ। কোনো রকমে বাকি দিনগুলো চালিয়ে নিতে পারলেই হয়।'
গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দেশি আদা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ১৬০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা এবং খেসারির ডাল ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এমএ