নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে হানিফ নামে এক সিকিউরিটি গার্ডকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সংরক্ষিত এলাকা, ওয়াসার জোড়া পানির টাংকির বাউন্ডারির ভেতরে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিহত হানিফকে বাড়ি থেকে মারধর করতে করতে ওয়াসার জোড়া পানির টাংকির ভেতরে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে তাকে শহরের খানপুরস্থ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আবু হানিফ খানপুরের ইতু ভিলায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি বরিশালের শরণখোলা এলাকার আবুল কালামের মেঝো ছেলে।
নিহতের বোন জয়নাব ওরফে রাবেয়া জানান, সোমবার দুপুরে হানিফ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় খানপুরের অভি ও আরও কয়েকজন এসে হানিফকে লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। পরে তার মাথা দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করে। এরপর হানিফকে মারধর করতে করতে ওয়াসার জোড়া পানির টাংকির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাবেয়া বলেন, অভি ও তার লোকজন জানায়, হানিফ নাকি ১২-১৩ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমরা এই ঘটনার সত্য-মিথ্যা কিছুই জানি না। তবে যাকে ধর্ষণের শিকার বলা হচ্ছে, সেই মেয়েটি কিন্তু সুস্থ ও স্বাভাবিক। অথচ তারা আমার ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
তিনি আরও জানান, হানিফকে তুলে নেওয়ার পর অভি লোকজনের মাধ্যমে আমাদের জোড়া পানির টাংকির নিচে ডেকে পাঠায়। তখন আমি ও আমার স্বামী ইবরাহিম সেখানে যাই। সেখানে অভি আমার স্বামী ইবরাহিমকেও চরথাপ্পড় মারে এবং তার লুঙ্গি টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করে। আমাদের নানা ধরনের হুমকি দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যার পরে জানতে পারি, আমার ভাই হানিফের লাশ খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়েই তার মরদেহ দেখি।
তিনি বলেন, হানিফের তিন সন্তান রয়েছে। বড় সন্তানের বয়স ৬ বছর, মেঝো সন্তানের আড়াই বছর এবং ছোট সন্তানের বয়স মাত্র ৬ মাস। আমার ভাই যদি অপরাধী হয়েও থাকে, দেশে তো আইন-আদালত রয়েছে। তাকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো কেন? এখন তার সন্তানরা না খেয়ে থাকবে।
নিহতের ভগ্নিপতি ইবরাহিম বলেন, দুপুরে আমার শ্যালিকা ফোন করে জানায়, হানিফকে মারধর করা হচ্ছে। তখন আমি কর্মস্থলে ছিলাম। বাসায় গিয়ে কাউকে না পেয়ে আবার কাজে ফিরে যাই। পরে বাসায় ফিরলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ওয়াসার জোড়া পানির টাংকির বাউন্ডারির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে খানপুরের আজিম ভিলার অভি ও তার লোকজন আমাকে থাপ্পড় মারে, আমার লুঙ্গি টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করে। আমাদের গালাগাল করে ও নানা ধরনের হুমকি দেয়। এরপর তারা আমাদের কাছে টাকা চায়। আমরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা হানিফকে একটি অটোতে তুলে নেয়। তখন আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির আহমদ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএস/আরএন