ঢালিউড সুপারস্টার সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা গ্রহণ করে পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার বাদীপক্ষের করা রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এই রায় দেন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে মারা যান সালমান শাহ। অভিনেতার হঠাৎ মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেছিলেন তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। তবে এ দাবি মানেনি সালমান শাহর পরিবার। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই, ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলা করেন সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগ একত্রে তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর আদালত সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে রায় দেন। এই রায় প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন সালমানের বাবা।
২০০৩ সালে রিভিশন মামলায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর, ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তার প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এরপর ছেলের মৃত্যুর বিচার দাবি করে আসা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যু হলে, মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালে তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন। এরপর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে, ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত সেই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন।
এই নিষ্পত্তির আদেশের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবারও রিভিশন মামলা দায়ের করে বাদীপক্ষ। মামলায় বলা হয়, একাধিক ব্যক্তির প্রভাবে হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিত হত্যাকে আত্মহত্যা বা অপমৃত্যু বলে চালানো হয়েছে। তাই সত্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।
সালমান শাহর প্রকৃত নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী এবং মা নীলা চৌধুরী। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’সহ একাধিক টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন।
তার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ছিল ‘বুকের ভেতর আগুন’। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তিনি ১৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় জুটি হিসেবে বিবেচিত।
আরএন