অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দেওয়া বিভিন্ন আশ্বাসের ভিত্তিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি আসনে নিজ নিজ দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি নরসিংদীর রায়পুরাতেও।
এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা-২০৩) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন অর্ধডজনেরও বেশি নেতা।
এদের মধ্যে রয়েছেন—বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, নরসিংদী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব জামাল আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক ও রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম.এন. জামান, নরসিংদী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেল, জেলা বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাদল।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই নিজ নিজ কৌশলে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তবে শোনা যাচ্ছে, আশরাফ উদ্দিন বকুল যেন মনোনয়ন না পান, সে লক্ষ্যে অন্য প্রার্থীরা একজোট হয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন আলোচনা সভা ও সমাবেশে উভয় পক্ষ থেকেই চলছে তীব্র সমালোচনা ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দল থেকে তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে শোকজ করা হয়েছে এবং রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে নরসিংদী জেলা বিএনপি।
তবে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল। তিনি দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন এবং মাঠ পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এবারও তিনি মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন দলের একটি অংশ।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটি ভিন্ন সমীকরণ কাজ করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কিছু প্রবীণ নেতার মতে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে নরসিংদী-৫ আসনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুবদলের নেতা মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ ও রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেল মনোনয়ন দৌড়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতা মনে করছেন, যদি আশরাফ উদ্দিন বকুল মনোনয়ন না পান, তাহলে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অবস্থান বিবেচনায় ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা ইকবাল হোসেন শ্যামল মনোনয়ন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে শ্যামল আশরাফের গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন বলেও তারা মনে করছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন নামক ‘সোনার হরিণ’ পাবেন, তা নির্ভর করছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের ওপর। এ নিয়ে উপজেলাবাসী ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের কৌতূহলের শেষ নেই। ইতোমধ্যে বিএনপি অনেক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও রায়পুরার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন মাঈনউদ্দিন ভূঁইয়া। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ (তৎকালীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) মনোনীত প্রার্থী আসাদুল হক খসরু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন মাঈনউদ্দিন ভূঁইয়া।
পরবর্তীতে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুইবার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবদুল আলী মৃধা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এরপর থেকে টানা সাতবার আওয়ামী লীগ মনোনীত রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ফলে শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগ পর্যন্ত এই আসনটি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।
টিএস/আরএন