পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২৫ বছর ধরে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন ২৫৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। বেতন না পাওয়ায় তাঁরা দুঃসহ পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকের অবসরকাল ঘনিয়ে এসেছে। জানা গেছে, চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী আগামী এক বছরের মধ্যে ৪৪ জন শিক্ষক ও কর্মচারী অবসরে যাবেন।
সূত্রে জানা গেছে, দেবীগঞ্জ উপজেলায় নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে—১৫টি স্কুলে ১০৫ জন শিক্ষক ও ৫৪ জন কর্মচারী, ৩টি কলেজে ৪৮ জন শিক্ষক ও ১৮ জন কর্মচারী, ২টি মাদ্রাসায় ১৪ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী এবং ১টি কারিগরি স্কুলে ৬ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।
# উপজেলায় নন-এমপিও স্কুল ও কলেজের সংখ্যা ২১টি।
# অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ২৫ বছর আগে।
# এর আগে গত ১১ ই মার্চ শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব আশ্বস্ত করায় আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষকরা।
# আগামী ২৩ শে অক্টোবরের মধ্যে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত না নিলে ফের আন্দোলন।
# আগামী ১ বছরের মধ্যে অবসরে যাবেন ৪৪ শিক্ষক ও কর্মচারী।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ২২ থেকে ২৫ বছর ধরে নিয়মিত পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন এবং সন্তোষজনক ফলাফল করছেন। শিক্ষকরা দাবি করছেন, সরকার নির্ধারিত এমপিওভুক্তির সকল শর্ত তাঁরা পূরণ করেছেন, তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে মোট ২৫৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারী কর্মরত আছেন।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় ২১টি নন-এমপিও স্কুল ও কলেজে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনা করছেন। তাদের পরীক্ষার ফলাফলও সন্তোষজনক।
উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের লক্ষীর হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ৭ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী।
প্রধান শিক্ষক নিতাই চন্দ্র রায় বলেন, ২৫ বছর ধরে বেতন ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছি। আমার সংসার এখন অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু। জীবনের সবটুকু সোনালী সময় এই বিদ্যালয়ে ব্যয় করেছি, বিনিময়ে ১ টাকাও ভাগ্যে জোটেনি। বেঁচে থাকলে হয়তো আর কয়েক বছর পর অবসরে যাবো। সরকারের কাছে অনুরোধ—শিক্ষকদের জন্য না হোক, এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখতে অতি দ্রুত এমপিওভুক্ত করুন।
উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালীগঞ্জ মহাবিদ্যালয়। এখানে ১৮ জন শিক্ষক ও ৭ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন।
অধ্যক্ষ মোঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৭% বেসরকারি। বেসরকারি শিক্ষার ওপর সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। আমার কলেজ ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত। আমাদের ছাত্রছাত্রীরাই এখন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছে, অনেকে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সুনামের সাথে দেশের সেবা করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য—আমাদের খেয়ে-পড়ে বাঁচার নিশ্চয়তাটুকুও আজ অবধি হয়নি।
উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের ছলিমনগর তোপকাচারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে। এই প্রতিষ্ঠানেও ৭ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন।
প্রধান শিক্ষক এবং নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি মোঃ কফিল ইসলাম বলেন, আমাদের নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একাডেমিক স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতিসহ এমপিওভুক্তির সকল শর্ত পূরণ করেছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সংসার চালাতে এবং ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে না পেরে অনেক শিক্ষক স্কুল বন্ধের সময় কুলি-মজুরের কাজ করেন, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের বারবার আশ্বস্ত করলেও আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে কার্যকর সিদ্ধান্ত না এলে আমরা পুনরায় আন্দোলনে যাবো।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সাইফুল আলম বলেন, নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিষয়। আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
এইচআর/আরএন