সাভারে টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরার পথে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় মিঠু বিশ্বাস (৩৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা। এর আগে রবিবার ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও থানার তেজকুনিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সাভার মডেল থানার পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত মিঠু বিশ্বাস ঢাকা সাভার থানার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকার গোয়ালিয়া পাড়া মহল্লার দেবেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে একই এলাকার সোহেল রোজারিও (৩৭), বিপ্লব রোজারিও (৪০)। সোহেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং বিপ্লব ও মিঠুর বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী তরুণী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে তাঁর পরিবার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের একই এলাকায় বসবাস করে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ওই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাভারে এক ছাত্রকে প্রাইভেট পড়ানোর পর বাসায় ফেরেন। কিন্তু এসে দেখেন বাসা তালাবদ্ধ। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর মা বাসায় তালা দিয়ে পাশের এক চা–দোকানির কাছে চাবি রেখে গেছেন। পরে তিনি দোকান থেকে চাবি নিয়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে সোহেল রোজারিও ওই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিছুদূর যাওয়ার পর সোহেলের সঙ্গে অন্য দুই আসামির দেখা হয়। এরপর তাঁরা ওই শিক্ষার্থীকে অনুসরণ করতে থাকেন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন সোহেল। এ ঘটনায় সহযোগিতা করেন অন্য দুই আসামি। ধর্ষণের পর সোহেল ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী ছাত্রী তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এর পর থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু হয়। আশা করছি, পলাতক অন্য দুই আসামিকেও দ্রুতই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, রবিবার ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও থানার তেজকুনিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিঠুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সাভারের কমলাপুর এলাকায় বর্বোরচিত ধর্ষণের প্রতিবাদে ও সার্বিক নিরাপত্তাবিধান নিশ্চিতে রবিবার বিকেল চারটায় তিন দফা দাবিতে সাভার মডেল থানা প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় ঢাকা জেলার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এনসিপির তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ নীরব-গহিন এলাকায় পর্যাপ্ত লাইটিং, সিসিটিভি ক্যামেরা ও টহলের ব্যবস্থা এবং সাভারে খুন-গুম-ধর্ষণের জন্য যৌথ বাহিনীর স্পেশাল সেল গঠন করা।
ঢাকা জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী মেহরাব সিফাত বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে নিত্যদিনের পত্রিকায় ধর্ষণ–কান্ডের খবর না হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এটি নিশ্চত করতে ধর্ষণের মতো বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ করা যাবে না। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। সাভারে প্রতিটি এলাকায় জনগণের চলাচল নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে হবে। যৌথ বাহিনীর স্পেশাল সেল গঠনের মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগীরা যেন দ্রুত সহায়তা পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ওএফ/এসআর