ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ির বাঁধে চলছে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। প্রতি বছরের মতো এবারও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুক নদীর বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসবে মেতেছেন হাজারো মানুষ।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঁধের গেট ছাড়ার পর রাত ৮টা থেকে মাছ ধরতে নামেন তারা। শনিবার ও রবিবারও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসব চলেছে। বাঁধের পাড় ছপ ছপ জালের শব্দে মুখরিত ছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাছ ধরেছেন। তবে কেউ যাতে অভয়াশ্রমে গিয়ে মাছ না ধরে সে বিষয়ে মৎস্য বিভাগ তৎপর।
জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য বুড়ির বাঁধে জলকপাট নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এখানে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়, যার দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ।
সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি থেকে আসা মনোয়ার হোসেন ও আফজাল হোসেন বলেন, “প্রতিবারই এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে। সবাই মিলে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা এখন এক ধরনের মেলায় পরিণত হয়েছে।”
বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামের রথিন্দ্র ও যতি মোহন বলেন, “গতবার অনেক মাছ পেয়েছিলাম। এবারে রিং জাল ব্যবহারের কারণে মাছ কম পেয়েছি। এটি হতাশার বিষয়।”
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুঁটি, ষোল, শিংসহ প্রায় তিন কেজি দেশি মাছ পেয়েছি।”
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাফিউল বারী বলেন, “১৯৫১-৫২ সালে বুড়ির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতিবছর বাঁধের গেট ছাড়ার পর বহু মানুষ এখানে সমাগম ঘটে এবং সবাই মিলে মাছ ধরে। এর মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ হয়।”
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, “এবারও মাছ ধরার উৎসব শুরু হয়েছে। কেউ যাতে অভয়াশ্রমে মাছ না ধরে তা নিয়ে আমরা তৎপর। প্রতিবছর বুড়ির বাঁধে মাছ ছাড়ে মৎস্য অধিদপ্তর।”
সরেজমিনে দেখা যায়, কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল ও ছেঁকাজাল। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই, তারাও খালি হাতেই কাঁদার মধ্যে মাছ খুঁজছেন। বাঁধের পাড়ে ভিড় জমিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমন দৃশ্য গ্রাম-বাংলার চিরচেনা রূপের কথা মনে করিয়ে দেয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কিছু অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে অভয়াশ্রমে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ছাড়ে মৎস্য অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ। তবে বিগত ২-৩ বছরে কাঙ্খিত মাছ না পাওয়ায় জেলা জেলে, মৎস্যজীবি ও মৎস্যপ্রেমিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, “মাছ ধরার উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী ও সার্বজনীন। এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ অংশ নেন। কিছুটা সমন্বয়হীনতা থাকলেও এটি অবহেলা নয়। সমস্যার সমাধান করে বুড়ির বাঁধের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে।”
উল্লেখ্য, প্রতিবছর বাঁধের গেট ছাড়ার পর বহু মানুষ সমাগম করে এবং সবাই মিলে মাছ ধরেন, যা আমিষের চাহিদা পূরণে সহায়ক।
এএ/এসআর