রাজশাহী ‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’ হিসেবে দেশজুড়ে সুপরিচিত। বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় উপরের দিকে থাকলেও এখানকার কর্মসংস্থান পরিস্থিতি দিনে দিনে উদ্বেগজনক। উচ্চশিক্ষিত তরুণরা পড়াশোনা শেষ করেও পাচ্ছেন না উপযুক্ত চাকরির সুযোগ। প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক হয়ে নিরাশ হয়ে ঘুরছেন চাকরির খোঁজে।
স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীর অধিকাংশ শিক্ষার্থী সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকছেন। তবে সীমিত পদ ও কঠোর প্রতিযোগিতার কারণে অনেকেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত শিল্প ও কারখানা না থাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে না। বিশেষ করে আইটি, গার্মেন্টস, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের অভাব রাজশাহীতে তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
নগরীর তালাইমারী এলাকার রহিদুল ইসলাম বলেন, “এক বছরে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও কাঙ্খিত চাকরি পাইনি। মনে হয়, চাকরি পেতে হলে টাকার পাশাপাশি পরিচিতকেও কাজে লাগাতে হয়।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মুজাহিদ অভিযোগ করেন, “আমরা পড়াশোনা শেষ করলেও রাজশাহীতে চাকরির সুযোগ খুব সীমিত। ঢাকায় গিয়ে চাকরির বাজার ভালো, কিন্তু আমাদের নিজের শহরেও শিল্প ও ব্যবসা বাড়ানো দরকার।”
এমবিএ শেষ করা সৈয়দ সাজিদ আলী বলেন, “রাজশাহী শিক্ষাবান্ধব শহর হিসেবে পরিচিত, কিন্তু আমাদের দিনের পর দিন বেকার থাকতে হচ্ছে। নিজের এলাকায় চাকরি পাওয়া সম্ভব হলেও আমরা ঢাকায় ঘুরতে বাধ্য হচ্ছি।”
শহরের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। নদীপথের ব্যবহার বাড়িয়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন, উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে লোন ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহী কলেজের তাসলিমা রুম্পা বলেন, “আমরা চাই যেন কোন শিক্ষার্থী বেকার না থাকে।”
বর্তমানে নওদাপাড়া এলাকার রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস নতুনভাবে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের মাধ্যমে চালু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১২ হাজার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির ঘোষণা দিয়েছে, তবে ইতোমধ্যেই ২ হাজার লোকের চাকরি হয়েছে। প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ চাকরির আশায় গেটের সামনে বসে থাকেন, যা প্রমাণ করে এই অঞ্চলে চাকরির তীব্র চাহিদা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজশাহীতে শিল্পায়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হলে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ানো জরুরি। কৃষি, সিল্ক, আম ও লিচু প্রক্রিয়াজাত শিল্প, আইটি পার্ক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়তা কর্মসূচি চালু করলে কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাববিজ্ঞান বিভাগের ডিন এস.এম একরাম উল্লাহ বলেন, “সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে। বেকার শিক্ষিত যুবকদের কাজে লাগাতে শিল্প, ব্যবসা ও উদ্যোক্তা সুযোগ তৈরি করতে হবে।”
শহরের তরুণরা দাবি করেন, “রাজশাহীতে আঞ্চলিকভাবে শিল্প ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই বেকারত্ব কমবে এবং দেশের উন্নয়নে সমানভাবে অবদান রাখা সম্ভব হবে।”
আরএইচএফ/এসআর